সঙ্কটে ১০ ব্যাংক।

সঙ্কটে ১০ ব্যাংক।
ডন প্রতিবেদন : করোনাভাইরাসের মহামারি চলাকালীন গত বছর ঋণের টাকা পরিশোধ না করেও খেলাপি হয় নি কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরও ঋণ পরিশোধে রয়েছে বিশেষ ছাড়। এ বার ঋণের কিস্তির মাত্র ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে খেলাপি করা যাবে না। নানা সুবিধার পরও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) বা শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে অর্থ সংস্থানে ঘাটতিতে পড়েছে ১০ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। এ ছাড়া ঘাটতির তালিকায় আছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। উল্লেখ করা যেতে পারে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে, তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। কোনও ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ ঋণে পরিণত হলে তাতে যেনো ব্যাংক আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য এ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনও লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাঁদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গেলো সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিনাকাধীন বাণিজ্যিক খাতের জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরপরই বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ১২৮ কোটি ৭ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৯২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২১ কোটি ৬ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের ৫ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩ হাজার ৩০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতি ন্যাশনাল ব্যাংকের। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৭১ কোটি ৭১ লাখ, ঢাকা ব্যাংকের ১৯০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৫৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী আরও জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিলো ৭২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৬৬ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কোনও কোনও ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত (উদ্বৃত্ত) অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। জানা গেছে, করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার পরও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এ ৯ মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ ৩ মাসে বেড়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। সবমিলে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।