আজন্ম বিপ্লবী চে গুয়েভারার মৃত্যু দিবস

আজন্ম বিপ্লবী চে গুয়েভারার মৃত্যু দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : ‘চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়/ আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা/ আত্মায় অভিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দ/ শৈশব থেকে বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস...।’ বিপ্লবী চে গুয়েভারার মৃত্যুকে এভাবেই স্মরণ করেছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রাণ হারান চে গুয়েভারা। তাঁকে আহত অবস্থায় হত্যা করে বলিভিয়ার সেনাবাহিনী।

১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার এক সচ্ছল পরিবারে জন্ম আর্নেস্তো চে গুয়েভারার। আইরিশ বাবা ও স্প্যানিশ মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চে ছিলেন সবার বড়। ‘চে’ তাঁর প্রকৃত নাম নয়। তাঁর প্রকৃত নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সেরনা। কিউবায় সফল বিপ্লবের পর কিউবার জনগণ ভালোবেসে তাঁর নাম দেয় ‘চে’। স্প্যানিশ ভাষায় ‘চে’ শব্দের অর্থ ‘প্রিয়’।

খুব অল্প বয়স থেকে চে গুয়েভারার হৃদয়ে সমাজের বঞ্চিত, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি হতে থাকে। ১৯৪৮ সালে তিনি বুয়েনস এইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনায় এক বছরের বিরতি নিয়ে ১৯৫১ সালে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে বের হন। দীর্ঘ এই ভ্রমণ তাঁকে অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অনুধাবন করার সুযোগ এনে দেয়। তিনি এই মত পোষণ করেন যে দক্ষিণ আমেরিকা আলাদা আলাদা কোনো দেশের সমষ্টি নয়; বরং এই দেশগুলো একটি অভিন্ন অস্তিত্ব, যার মানুষদের দুঃখ–কষ্ট লাঘবের একমাত্র হাতিয়ার সশস্ত্র বিপ্লব।

১৯৫৫ সালে ঘটনাক্রমে মেক্সিকো সিটিতে নির্বাসিত কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ও রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁদের সঙ্গে কিউবার তৎকালীন একনায়ক বাতিস্তাকে উৎখাতের আন্দোলনে যোগ দেন চে। দুই বছরব্যাপী চলা আন্দোলন একসময় সফল হয়। এই আন্দোলনে চে গুয়েভারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলে চে হয়ে ওঠেন কাস্ত্রো–ভাইদের কাছের মানুষ এবং তিনি কিউবার শিল্পমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

চে ছিলেন আজন্ম বিপ্লবী। বিপ্লবের নেশা মিশে ছিল তাঁর রক্তে। ফলে তিনি নতুন দেশে বিপ্লবের আশায় কিউবা ত্যাগ করেন। তিনি তাঁর সেকেন্ড কমান্ড ভিক্টর বার্ক এবং ১২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে কঙ্গোয় গিয়ে প্যাট্রিস লুমুম্বার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন। এরপর চে তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে চলে যান বলিভিয়ায়। সেখানে গিয়ে শুরু করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট স্বৈরশাসক বারিয়েন্তোসের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ। বারিয়েন্তোসের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় গুরুতর আহত হয়ে বন্দি হন চে। বলিভিয়ার লা হিগুয়েরা নামক একটি গ্রামের স্কুলঘরে সারা রাত আটকে রেখে পরের দিন তাঁকে হত্যা করা হয়।

চে গুয়েভারার জীবন ছিলো গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর। তিনি তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নতজানু হয়ে সারা জীবন বাঁচার চেয়ে বীরের মতো মৃত্যুকে বরণ করাই শ্রেয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কিসের জন্য বাঁচব সেটা নিশ্চিত হতে পারি না, যতক্ষণ না আমরা তার জন্য মরতে প্রস্তুত থাকি।’