অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনায় এক শিক্ষককে আ.লীগ থেকে অব্যাহতি।

অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনায় এক শিক্ষককে আ.লীগ থেকে অব্যাহতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের আক্তার হোসেন টিংকু নামের এক শিক্ষককে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অচীন কুমার চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শুক্রবার (পহেলা জুলাই) এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

শিক্ষক টিংকু।

দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া টিংকু রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি নড়াইল সদরের বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করতেন।

যা আছে নোটিশে : টিংকুকে দেওয়া নড়াইল সদর আওয়ামী লীগের নোটিশে বলা হয়, ‘এতদ্বারা আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা যাচ্ছে যে, গত ১৮ জুন/২২ তারিখে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রের মোবাইলে স্ট্যাটাস নিয়ে এক সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, আপনি উক্ত কলেজের একজন শিক্ষক এবং ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরিশেষে দেখা যায়, আপনার উপস্থিতিতে উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে বাহির করে আনা হয়, যাহা নিন্দনীয়, শিক্ষকসমাজকে হেয়প্রতিপন্ন করার শামিল।’

‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, মিডিয়ার খবরে আপনাকে জড়িত করে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। সে কারণে আপনি এর দায়িত্ব এড়াইতে পারেন না এবং আমরা মনে করি, আপনি সভাপতি হিসেবে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

‘উপরোক্ত কারণে আপনাকে উক্ত বিষয়ে এই পত্র পাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীদ্বয়ের নিকট লিখিত কারণ দর্শাইতে বলা গেলো এবং অদ্য হইতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া গেলো। ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মশিয়ার রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া গেলো।’

ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাঁকে তুলে নেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। এই কমিটিতে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেনের নেতৃত্বে আছেন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবির ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান।