১৮ ন্যায্য দাবি মেনে নিয়েছি, কাজে ফিরুন : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

১৮ ন্যায্য দাবি মেনে নিয়েছি, কাজে ফিরুন : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : শ্রমিকদের ১৮টি ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে তাঁদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

তিনি হুঁশিয়ার দিয়েছেন, এরপর কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে সরকার তা বরদাশত করবে না।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সরকার, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমি আহ্বান জানাতে চাই, আপনাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। আর যেই দাবিগুলো শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মেনে নেওয়া যায়, সেই দাবিগুলো মেনে নেবো খুব দ্রুতই।'

তিনি বলেন, আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, দেশের শিল্পকে বাঁচানোর জন্য দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য যে নতুন বাংলাদেশ আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি, তাকে সমুন্নত রাখা এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারা স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ এবং সরকারপক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হচ্ছে, দীর্ঘ এক মাস ধরে আলোচনা, দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে যে মূল দাবি ১৮টা, আমরা আইডেন্টিফাই করেছি। সেই ১৮ দাবির বিষয়ে মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ মিলে একটা সমাধানে পৌঁছানো গেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই দাবিগুলো সমাধানের দিকে আমরা আগাবো। যেগুলো সমাধান সম্ভব, সেগুলো আজকে ইমিডিয়েটলি সমাধান করে দিয়েছি এবং যেগুলো দুইপক্ষের বৈঠকের মধ্যে সমাধান হবে, সেগুলো শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হবে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে।

বুধবার থেকে সব কারখানা চালু রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিল্পকারখানা যাতে বাঁচে, শিল্প যাতে হাতছাড়া না হয়, সেজন্য শ্রমিক, মালিক, সরকার- সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।

তিনি বলেন, যদি শিল্প না বাঁচে তাহলে শ্রমিকও বাঁচবে না, সরকারেরও প্রয়োজন হবে না এবং মালিকও বাঁচবে না। আমাদের শিল্পকে বাঁচাতে হবে, আমাদের শিল্প যাতে হাতে থাকে- সেটা নিশ্চত করতে হবে। মালিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন খুব দ্রুত পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেবেন।

আসিফ মাহমুদ সতর্ক করে বলেন, আগামীকাল থেকে এই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার প্রেক্ষিতে যদি কোনও পক্ষ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, সেটা যদি কোনও মালিকপক্ষ বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ প্রকাশ করে এবং সদিচ্ছার অভাব থাকে এবং শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং যেহেতু সবগুলো দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সবপক্ষকে আমরা বসাতে পেরেছি। সরকার কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা আর বরদাশত করবে না। সেটার ব্যপারে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিল্প সচল দেখতে চাই :
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ একটা আলোচনার পর আমরা একটা সমঝোতায় পৌঁছেছি। এখন এই সমঝোতা স্মারকে আমার মালিকপক্ষ স্বাক্ষর করেছে, আমার শ্রমিক ভাই-বোন স্বাক্ষর করেছে। এখন এই যে সমঝোতা চুক্তিটা বা স্মারক যেটাই বলেন না কেন, এটা আমরা সবাই মেনে চলবো, এটা আমাদের সবাইকে অঙ্গীকার করতে হবে। এবং এই সমঝোতা চুক্তি থেকে আমাদের কিন্তু পিছু হটার কোনও কারণ নাই।

তিনি বলেন, এটা থেকে কেউ কোনও বাহানা দিয়ে নড়তে পারবেন না। আবারও বলছি, আগামীকাল থেকে দেখতে চাই, এই শিল্পটা সচল। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন উস্কানির মাধ্যমে এই শিল্পটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়; এটা শুধু দেশে না, বাইরে থেকেও। এই শিল্পটা যদি বাইরে চলে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই ক্ষেত্রে আমাদের কী হবে? এটা কিন্তু আপনাদের সবাইকে চিন্তা করতে হবে। আপনারা সবাই জানেন এই শিল্পটা আমাদের কত প্রয়োজন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনও অবস্থাতেই নিজেদের হাতে নিবেন না। আগামীকাল থেকে আশা করব, কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন শিল্প এলাকায় না হয়। যদি আগামীকাল থেকে কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এর জন্য আপনারা যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন- আপনারাই দায়ী হবেন। আপনারাই এই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী হবেন, সেই সময় আপনারা পিছপা হতে পারবেন না। আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন, আপনারা সবাই কাজ করলে আমার মনে হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই অবনতি হবে না।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আপনাদের মনে করতে হবে- এই শিল্প আমাদের সব কিছু দিয়ে যাচ্ছে। শুধু আপনাদের না, দেশবাসীকেও দিয়ে যাচ্ছে- এটাও আমাদের মনে করতে হবে। শুধু দেড় কোটি মানুষ নয়, পুরো বাংলাদেশ এর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং এটা খেয়াল রাখতে হবে। আপনাদের আজকের অঙ্গীকার রাখতে হবে; তাহলে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। এর পরেও কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সেই জন্য আমাদের অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে, যা কারও জন্যই কাম্য নয়।

শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিউজ্জামান জানান, দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের ১৮টি দাবি মেনে নিয়েছে মালিকপক্ষ।

এসব দাবির মধ্যে আছে- টিফিন বিল দেওয়া, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রমঘন এলাকায় টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে রেশন প্রদান, শ্রমিকদের আগের বকেয়া ১০ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্তি বন্ধে নজরদারি, ঝুট ব্যবসা নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বা চাঁদাবাজি বন্ধে নজরদারি, ন্যূনতম মজুরি আন্দোলনসহ নানা সময়ের মামলা প্রত্যাহার, নিয়োগে ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করা, জুলাই আন্দোলনে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা করা, রানাপ্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনের বিষয়ে কমিটি গঠন, সব কারখানায় ডেকেয়ার সেন্টার নিশ্চিত করা, অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করা, নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে ৩ সদস্যর কমিটি গঠন, শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করা এবং বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট চালু করা।

সচিব সফিউজ্জামান বলেন, শ্রমিকপক্ষের ৩৫ জন প্রতিনিধি ছিলো, মালিকপক্ষ ছিলো। তাঁদের ১৮টি দাবিতে একমত পোষণ করেছি। কাল থেকে সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি নির্বিঘ্নে চলবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।