শেষ ওভারের অবিশ্বাস্য নাটকের পর বাংলাদেশের হার

শেষ ওভারের অবিশ্বাস্য নাটকের পর বাংলাদেশের হার
ডন প্রতিবেদন : নিস্তরঙ্গ ম্যাচ হঠাৎই জমজমাট শেষ দিকে। ক্রিকেট তার সমস্ত উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা আর নাটকীয়তা নিয়ে হাজির হলো ম্যাচের শেষ ওভারে। তিনটি উইকেট, ৯০ মিটার লম্বা ছক্কা, কালক্ষেপণের পাল্টাপাল্টিতে তুমুল জমে উঠলো লড়াই। কিন্তু সব রোমাঞ্চের শেষ বাংলাদেশের প্রাপ্তি আবারও হতাশা। কিন্তু এই হতাশা বাংলাদেশের নয়। এটি পাকিস্তানের। কারণ ওভারের শেষ বলে যখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মোহাম্মদ নওয়াজকে বোল্ড করলেন; তখন তিনি বললেন, তিনি নাকি প্রস্তুত ছিলেন না। পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তা মেনে নেওয়ায় বাউন্ডারি মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়ে দিলেন নওয়াজ। শেষ টি-টোয়েন্টিতে শেষ বলের নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারালো পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজ তারা জিতে নিল ৩-০তে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশের ১২৪ রান তাড়ায় ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে জয়ের পথে ছিলো পাকিস্তান। শেষ ১২ বলে তাদের প্রয়োজন যখন ১৫ রান, উইকেট তখনও বাকি ৮টি। দারুণ খেলে টিকে আছেন হায়দার আলি। ১৯তম ওভারে দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৭ রান দেন শহিদুল ইসলাম। শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার পড়ে ৮ রান। মাহমুদউল্লাহর নিজের বোলিংয়ে আসা ছাড়া বিকল্প খুব একটা ছিলো না। বিপিএলে শেষদিকের বোলিংয়ে দারুণ সাফল্যের অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। এবার অভাবনীয় এক জয়ের আশা জাগান বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রথম বলে রান নিতে পারেন নি সরফরাজ আহমেদ। পরের বলে তিনি মিড উইকেট সীমানায় ধরা পড়েন ছক্কার চেষ্টায়। তৃতীয় বলে আরেকটি উইকেট। এবার থিতু হয়ে যাওয়া হায়দার আলি (৩৮ বলে ৪৫) ধরা পড়েন লং অনে! ম্যাচ তখন দারুণভাবেই হেলে বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান ইফতিখার আহমেদ প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা মারেন। তবে নাটকের শেষ সেখানেই না। পঞ্চম বলে আবার উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ইফতিখার ধরা পড়েন শর্ট থার্ড ম্যানে। শেষ বলের আগে নাটক হয়। স্নায়ু থিতু করতে পাকিস্তান সময় নেয় কিছুটা। এরপর মাহমুদউল্লাহ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে বল ছাড়েন উইকেটের পেছন থেকে। এতে নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নওয়াজ বোল্ড হয়ে যান। যদিও একেবারেই শেষ মুহূর্তে তিনি বল না খেলে ছেড়ে দেন। তিনি বল না খেলে ছেড়ে দিতেই পারেন, তাতে বল হবে না; সেটা তো নয়। বরং তখন পাকিস্তান সেটি দাবি করে ‘ডেড বল’। আর বাংলাদেশ মেনেও নেয়। পরে আম্পায়ার ডেড বলের সঙ্কেত দেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, মাহমুদউল্লাহর বলটি উইকেটে পিচ করা পর্যন্ত স্টান্সেই ছিলেন নওয়াজ। বলটি বৈধ হওয়াই তাই ছিলো যৌক্তিক। পরের বল করতে এসে মাহমুদউল্লাহ আবার নেন কিছুটা ‘বদলা।’ বল ছাড়তে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ছাড়েন নি। শেষ রক্ষা যদিও হয় নি। বলটি যখন হলো, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে আনন্দে ভাসলেন নওয়াজ। বোলারদের সৌজন্যে লড়াই হলেও বাংলাদেশ আবারও হারার আয়োজন করে নেয় আসলে ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই। উইকেটের আচরণ যেটাই হোক, ম্যাচের পরিস্থিতি শুরু আর মাঝে যেমনই থাকুক, প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণ যেমনই হোক, ১৩০ রানও যেন বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রথম ম্যাচে ১২৭ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৮ করে এবার বাংলাদেশের সংগ্রহ মোটে ১২৪ রান। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ এই ম্যাচে ছিলো দ্বিতীয় সারির। একাদশে ছিলেন না শাহিন শাহ আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম, হাসান আলি ও শাদাব খান। তারপরও ধুঁকেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। দ্বিতীয় ম্যাচের পর জরুরিভিত্তিতে পারভেজ হোসেন ইমনকে দলে যোগ করা হলেও তরুণ ওপেনারকে রাখা হয় নি একাদশে। মোহাম্মদ নাঈম শেখেরসঙ্গে ইনিংস শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। জুটি থেমে যায় দ্বিতীয় ওভারেই। অভিষিক্ত শাহনওয়াজ দাহানিকে বাউন্ডারি মেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বাগত জানান শান্ত। কিন্তু ওই ওভারেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে শোধ তোলেন দাহানি। একাদশে ফেরা শামীম হোসেনকে তিনে নামিয়ে খানিকটা চমক দেয় বাংলাদেশ। শামীম শুরুটাও করেন আশা জাগিয়ে। তবে আরেকপ্রান্তে নাঈম থাকেন ঘুমিয়ে। পাওয়ার প্লেতে ১৩ বল খেলে নাঈমের রান ছিলো কেবল ৭। প্রথম বাউন্ডারি মারেন তিনি দশম ওভারে, লেগ স্পিনার উসমান কাদিরকে ছক্কায় উড়িয়ে। তার আগ পর্যন্ত রান ছিলো ২১ বলে ১০! ওই ওভারে আরেকটি চারও মারেন তিনি। কিন্তু বাকি চার বল দেন ডট। পরে কাদিরকে আরও একটি ছক্কা মারেন। কিন্তু তারপরও পুষিয়ে দিতে পারেন নি ঘাটতি। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে আউট হন ৫০ বলে ৪৭ করে। কিন্তু তাঁর হাফ সেঞ্চুরি করেই আউট হওয়া যৌক্তিক ছিলো। শামীম ও আফিফ চেষ্টা করেন ইনিংসকে গতি দিতে। তবে দুজনের কেউই পারেন নি বড় ইনিংস খেলতে। চার বাউন্ডারিতে শামীম করেন ২৩ বলে ২২। কাদিরের এক ওভারে দুটি ছক্কাসহ আফিফ করেন ২১ বলে ২০ রান। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহানরা পারেন নি দ্রুত রান তুলতে। তাতে দলের সংগ্রহও হয় নি খুব ভালো। রান তাড়ায় ছিলো না রান রেটের চাপ, বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটিংয়েও ছিলো না তাড়া। পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তান তোলে ২৮ রান। পরে বাবরকে (২৫ বলে ১৯) ফিরিয়ে দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। দ্বিতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও হায়দার আলির ৫১ রানের জুটি পাকিস্তানকে রাখে পথে। ঝড়ো ব্যাটিং করতে না পারলেও প্রয়োজনীয় রান রেট ছিল নাগালেই। ৪৩ বলে ৪০ করে রিজওয়ান আউট হওয়ার সময়ও মনে হয় নি, ম্যাচের শেষদিকটা জমে উঠবে এমন। হাতে চোট পেয়ে ১ ওভার বল করার পর মাঠ ছেড়ে আবার ফিরে বোলিং করেন তাসকিন। তবে ওভারের মাঝখানে বেরিয়ে যাওয়ায় পুরো করা যায় নি তার ৪ ওভার। শেষ ওভারে তাই বোলিংয়ে আসতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। সেটিই হয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশের শাপেবর। রোমাঞ্চের উথালপাথাল ঢেউয়ে ভেসে ম্যাচ গড়ায় শেষ বলে। নওয়াজের বাউন্ডারিতে দূরে চলে যায় বাংলাদেশের শেষ আশাটুকুও। সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৪/৭ (নাঈম ৪৭, শান্ত ৫, শামীম ২২, আফিফ ২০, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সোহান ৪, মেহেদি ৫*, আমিনুল ৩; নওয়াজ ১-০-২-০, দাহানি ৩-০-২৪-১, ওয়াসিম ৪-০-১৫-২, রউফ ৪-০-৩২-১, ইফতিখার ৪-০-১৩-০ এবং কাদির ৪-০-৩৫-২)। পাকিস্তান : ২০ ওভারে ১২৭/৫ (রিজওয়ান ৪০, বাবর ১৯, হায়দার ৪৫, সরফরাজ ৬, খুশদিল ০*, নওয়াজ ৪*; মেহেদি ৪-০-১৯-০, তাসকিন ৩.১-০-১৬-০, নাসুম ৪-০-২০-০, শহিদুল ৩.৫-০-৩৩-১, আমিনুল ৪-০-২৬-১ এবং মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-৩)। ফল : পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হায়দার আলি।