হাদিসুরের পরিবারের কান্নায় ভারী হয়ে উঠলো বিমানবন্দরের আকাশ।

হাদিসুরের পরিবারের কান্নায় ভারী হয়ে উঠলো বিমানবন্দরের আকাশ।
ডন প্রতিবেদন : বুধবার (৯ মার্চ) বেলা ১টা। শাহজালাল বিমানবন্দরের সিআইপি গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার ও রাশিদা বেগম দম্পতি। পাশেই অপেক্ষা করছেন তাঁদের মেজো ছেলে তারিকুল ইসলাম। আর ভেতরের গেটে উদ্‌ভ্রান্তের মতো এদিক-ওদিক ছুটছিলেন ছোট ছেলে গোলাম মাওলা। বড় ছেলে হাদিসুর রহমানের লাশের অপেক্ষায় সময় গুনছেন আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার ও রাশিদা বেগম। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক বুধবার দুপুর ১২টায় দেশে ফিরেছেন। তবে সহকর্মীদেরসঙ্গে ফেরা হয় নি হামলায় নিহত তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুরের। গত বুধবার (২ মার্চ) ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হয়। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে এ হামলা হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে নিহত হন হাদিসুর রহমান (৩২)। হাদিসুরের মরদেহ নিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিআইপি ও ক্রুদের প্রবেশদ্বারে অপেক্ষা করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। স্বজনের মরদেহ পাওয়ার আশায় আজ বুধবার সকাল থেকে বিমানবন্দরে ঘোরাঘুরি করছিলেন তাঁরা। হাদিসুরের স্বজনেরা সংবাদকর্মীদেরসঙ্গে কথা বলতে বলতে কেঁদে উঠছিলেন। হাদিসুরের ভাই গোলাম মাওলা বলছিলেন, ‘বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাইতেছে না আমার ভাইয়ের লাশ কোনদিন দেশে আসবে। আমার বাবা-মা সবাই অপেক্ষা করতেছেন, তাঁরা জানতে চান আমার কাছে। আমি কোনও জবাব দিতে পারতেছি না।’ ভাই হারানোর শোকে মাতম করছিলেন গোলাম মাওলা। চিৎকার করে একপর্যায়ে তিনি সড়কেই শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর পানি পান করতে চান। গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমারে নিয়া আমার ভাইয়ের কত স্বপ্ন ছিলো। সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেলো।’ হাদিসুরের বাবা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার কান্নার কারণে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। ভাঙা গলায় ছেলেকে নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর কথা বোঝা গেলো না। ডুকরে ডুকরে কান্না করছিলেন এ বাবা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা রাশিদা বেগম কান্না করতে করতে কাহিল। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আর আমারে ভালো-মন্দ খাইতে কইবো না। শেষ বার (গত বুধবার ২ মার্চ) যখন কথা হয়েছে, আমার বাবা আমাকে বলেছিলো, ভালো-মন্দ খাওয়া-দাওয়া করতে মন চায় তাঁর। ছেলে আর আমার কাছে কিছু চাইবো না।’ হাদিসুরের ভাই তারিকুল ইসলাম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমরা জানতাম ২৮ জন নাবিক আসবে। এরসঙ্গে ভাইয়ের লাশ আসবে, টিভিতে দেখেছি। আমাদের ধারণা ছিলো, ভাইয়ের লাশও আসতে পারে। আমরা ভাইয়ের লাশ দেখতে চাই।’ তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ফোনে ভাইয়েরসঙ্গে কথা বলতাম। ঘটনার দিন কথা হয়েছিলো। ভাই বলতো, আন্তর্জাতিক শিপে আছি আমরা। কোনও সমস্যা হবে না। আমার ভাইয়ের জন্য বুকটা কেমন করে, কেমন খালি খালি লাগে। আমাগো পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।’ হাদিসুরের চাচাতো ভাই সোহাগ হাওলাদার বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমার ভাই (হাদিসুর) মারা যাওয়ারসঙ্গে পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র মানুষ আর থাকলো না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে হাদিসুরের ছোট দুই ভাইয়ের জন্য যেনো চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীরসঙ্গে দেখা করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী যেনো আমাদের পরিবারকে দেখেন। এর আগে দুপুর ১২টায় বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ নাবিক নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে টার্কিস এয়ারলাইনসের টিকে-৭২২ ফ্লাইটটি। সকাল থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলেন এসব নাবিকের স্বজনেরা। বিমান অবতরণ করলেও বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে স্বজনেরা ইমিগ্রেশন ও বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বের হন। অবশ্য পরিবারের সদস্যরা তখনো জানেন না হাদিসুরের মরদেহ কবে আসবে।