হিজরতের নামে ঘরছাড়া নয় তরুণ-তরুণী ফিরছেন নতুন জীবনে

হিজরতের নামে ঘরছাড়া নয় তরুণ-তরুণী ফিরছেন নতুন জীবনে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : জঙ্গিবাদ ও কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া নয়জন তরুণ-তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম ও ব্যাটালিয়ন এই নয় তরুণ-তরুণীকে উদ্ধার করে।

সোমবার (২ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে এই তরুণ-তরুণীদের তাঁদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। র‌্যাব মহাপরিচালক অতিরক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেনের হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তীসময়ে তাদের ভবিষ্যৎ গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

র‌্যাব সূত্র জানায়, ওই নয় তরুণ-তরুণী সম্প্রতি কথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তাঁরা কোনও জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে না জড়ালেও নিজেরাই তাঁদের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড়ে যেতে চেয়েছিলেন হিজরত করতে। তাঁরা বাসা থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার পর স্বজনেরা সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেন। ওই জিডির সূত্র ধরে তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়।

প্রাথমিকভাবে র‌্যাব জানতে পেরেছে, নিখোঁজ নয় তরুণ-তরুণী নতুন বা পুরোনো কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নয়, নতুনভাবেই তাঁরা হিজরত করতে চেয়েছিলেন। হিজরতের জন্য তাঁরা ব্যবহার করতেন ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ। তাঁরা জঙ্গিবাদের জন্য নিজেরাই গ্রুপ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। পরে বুঝতে পারেন এটা আসলে ভুল পথ। তাঁদের উপলব্ধি হয় যে, তাঁরা অনলাইনে বিভিন্ন উগ্র মতাদর্শের গ্রুপের পেজ দেখে ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন।

তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে র‌্যাব জানতে পেরেছে, ওই নয় তরুণ-তরুণী নিজেরাই হিজরতের পথে পা বাড়ান। তাঁদের মা-বাবা ও পরিবার উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকলেও তাঁরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। যেহেতু তাঁরা এখনো কোনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত হন নি, তাই তাঁদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে ওই নয় তরুণ-তরুণীর গতিবিধি ভবিষ্যতেও পর্যবেক্ষণ করবে র‌্যাব।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন কোনও জঙ্গি সংগঠনে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয় নি। বিভিন্নভাবে ধর্মীয় অপব্যাখ্যায় তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময় হিজরতের নামে ঘর ছাড়েন। বিষয়টি জানার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদেকে উদ্ধার করে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। তাঁদের ডি-রেডিকালাইজড করে পরিবারের কাছে সোমবার হস্তান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, পাহাড়ে পলাতক জঙ্গি সদস্যদের ওপর র‌্যাবের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ তালিকায় একজন নারীকেও বুঝিয়ে আলোর পথে আনা হয়েছে।

সম্প্রতি জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে জঙ্গিদের নতুন সংগঠনে হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয় ৫৫ জনের বেশি তরুণ। এর মধ্যে পাঁচজনকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে র‌্যাব। আর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও র‌্যাব সদস্যরা এ সংগঠনের অন্তত ২৫ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে। 

জঙ্গিরা পাহাড়ে কুকি-চিন নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব ও পুলিশ।