সীতাকুণ্ডের ডিপোতে ৫ ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ নিহত অন্তত ৩৪ : আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা কাগজ; চট্টগ্রাম মহানগর : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ৫ ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ রোববার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে ৩ শতাধিক। তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে। এখনও ডিপোর ভেতর থেকে লাশ বের করে আনা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে এসেছে সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও ডিপোটিতে আগুন জ্বলছে। কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ।
কন্টেইনার ডিপোর বাইরে অবস্থান করছেন ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। তাঁরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
লাশ উদ্ধার হলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। সর্বশেষ সকাল আটটার দিকে দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইউনিয়নের কাশেম জুট মিল গেট এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে যান। এ সময়ই সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের আরও নয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এরপর যোগ দেয় আরও ৭টি ইউনিট।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় ২৬ একর জায়গায় কন্টেইনার ডিপোটি অবস্থিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান ও সুইজারল্যান্ডের এক ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় ডিপোটি চালু হয়। আমদানি-রপ্তানি করা বিভিন্ন পণ্য এই ডিপোতে রাখা হয়।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, ডিপোর ভেতরে ৫ শ মিটারের একটি টিনের শেড রয়েছে। এই শেডের টিনের পুরো অংশ উড়ে গেছে। বাতাসে উড়ছে ছাই। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিনের ভাঙা অংশ।
কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। শেডের আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও আগুন জ্বলছে। কোথাও ধোঁয়া উড়ছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো এলাকা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ডিপোর শ্রমিক সুপারভাইজার মোহাম্মদ মহসিন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণের পর ডিপোতে আগুন ধরে যায়। ডিপো থেকে শ্রমিকদের বের করে দিতে সঙ্গে সঙ্গে বাজিয়ে দেওয়া হয় সতর্কঘণ্টা। তবে সব শ্রমিকরা বের হতে পারেন নি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডিপোর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ শ মিটার শেডের ভেতরে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামে একটি কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানির জন্য হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়ি কারখানায় উৎপাদিত কেমিক্যাল কন্টেইনারে করে এই ডিপোতে রাখা হয়।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমানকে সকালে ডিপোর গেটের সামনে তাঁর লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। তিনি ঘটনাস্থলের বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছিলেন।
জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, কন্টেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামের কেমিক্যাল বিপুল পরিমাণে রয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটলো, তা এখনো জানা যায় নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর ভেতর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছে।
আনিসুর রহমান আরও বলেন, চট্টগ্রামের পাশাপাশি কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ জন কর্মী আগুন নেভাতে কাজ করছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতিসহ আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।
ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। বাইরে উৎসুক জনতার ভিড় আছে। অহেতুক লোকজন যাতে এখানে ভিড় না করতে পারে, উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সে জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কন্টেইনার ডিপোর দক্ষিণ পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল গাউছিয়া কমিটির সদস্য তাওহীদুল আলম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ভেতর থেকে কোনও লাশ উদ্ধার হলে, তা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আজ সকাল থেকে নয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
গাউছিয়া কমিটির পাশাপাশি আল মানাহিলসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ডিপোর আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে। উদ্ধারসহ নানা কাজে তাঁরা সহায়তা করে যাচ্ছে।