লাখো মানুষের সমাগম জাতীয় চিড়িয়াখানায়।

লাখো মানুষের সমাগম জাতীয় চিড়িয়াখানায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : রাজধানী ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন খুদেজা বানু। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়। তিনি এবার ঈদে গ্রামে যান নি। তাই গ্রাম থেকে বাবা, মা ও দুই ভাই ঢাকায় এসেছেন তাঁর সঙ্গে ঈদ করতে। তাঁদের নিয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার (৪ মে) জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন খুদেজা বানু। তিনি বলেন, ‘আম্মা কোনও দিন চিড়িয়াখানা দেখে নাই। বাঘের খাঁচার সামনে যাইতে ভয় পাইতেছিলো।’ খুদেজা বানুদের মতো এদিন মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় এক লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটেছে। ব্যাপকসংখ্যক মানুষ চিড়িয়াখানায় আসায় শিশুসহ ৭০ জন তাঁদের সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সবাইকে খুঁজে পাওয়া গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানিয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মজিবুর রহমান। মজিবুর রহমান বলেন, এক লাখের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। ‘আজ (বুধবার) চিড়িয়াখানায় স্মরণকালের রেকর্ডসংখ্যক মানুষ এসেছে। আমি নিজে চিড়িয়াখানার দায়িত্বে আট বছর ধরে আছি, এতো লোক কখনো দেখি নি। কোনও কোনও সময় প্রধান গেট খুলে দিয়ে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। গেট ভেঙে ফেলবে মনে হচ্ছিলো, এ রকম অবস্থা।’ জাতীয় চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। তাঁরা চিড়িয়াখানার পরিচালককে এক লাখেরও বেশি টিকিট বিক্রির তথ্য জানালেও ঠিক কতো সংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়েছে, তা জানায় নি। জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক পরিচালক আবদুল লতিফ বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ইজারাদার ব্যবসায়িক স্বার্থে টিকিট বিক্রির প্রকৃত তথ্য জানায় না। এটা তাঁদের ব্যবসায়িক কৌশল।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো। চিড়িয়াখানার ভেতরে যেমন মানুষ ছিলো, তেমনি বাইরেও ছিলো। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের দিন অনেকের ব্যস্ততা থাকে। তাই সবাই বাইরে বের হতে পারে না। এতে ঈদের দ্বিতীয় দিন বেশি মানুষ বাইরে বের হয়। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে বিকেলে চিড়িয়াখানায় আসেন আবদুল আলিম। তিনি বলেন, ‘মেয়েরে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। সকালে গেছিলাম জাদুঘরে। বিকেলে আসলাম চিড়িয়াখানা। এখানে এসে মেয়ে আমার খুব খুশি। হরিণ দেখে সরতেই চাচ্ছিলো না। মেয়ে বলে, “আব্বা আমি এখানেই থাকমু।’” জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক পরিচালক আবদুল লতিফ বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে চিড়িয়াখানার বিকল্প নেই। বাচ্চাকাচ্চারা পশুপাখি দেখতে চায়। বাঘ, সিংহ, বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েরা বইয়ে ছবি দেখে। তাঁরা বাস্তবে দেখতে চায়। চিড়িয়াখানার বাইরে ফ্যান্টাসি কিংডম আছে, কিন্তু সেটার খরচ সবাই বহন করতে পারে না। সেখানে একটি পরিবার গেলে ১০ হাজার টাকার দরকার হয়।’ ‘চিড়িয়াখানায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে’ বলেই উল্লেখ করেন আবদুল লতিফ।