রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি ১৪ দেশের।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি ১৪ দেশের।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে তৎপর থাকার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে ১৪ দেশ। তাঁদের ঢাকার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়।

রোহিঙ্গা গণহত্যা ও অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) এই বিবৃতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাঁচ বছর পর আমরা ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ভয়ঙ্কর ঘটনা স্মরণ করি। যা প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে তাঁদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছিলো।’

‘আমরা রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার মুখে তাদের অবিশ্বাস্য সহনশীলতা ও সাহসকে স্বীকার করি। আমরা বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাঁদের উদারতা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অব্যাহত আশ্রয় দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।’

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছি। পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন ও এই সঙ্কটের সমাধান চাই।’

তাঁরা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা মিয়ানমারজুড়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা মিয়ানমারে দায় মুক্তির সংস্কৃতির অবসানের আহ্বান জানাই।’

১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারেরা আরও বলেন, আমাদের দেশগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও মানবিক সঙ্কট সমাধানেও আমরা চাপ অব্যাহত রাখবো।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা, সুরক্ষা এবং শিক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁরা বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অংশীদারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকাকালে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনে গুরুত্বের ওপর জোর দিই। একইসঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে তাঁদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি।’ 

‘এ ছাড়া আমরা কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সমর্থন করে যাচ্ছি, যাঁরা শরণার্থীদের আতিথেয়তা দিচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের জন্য তাঁদের সমর্থনে সংহতিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। এই সঙ্কট এবং এর কারণগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হচ্ছে : অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, ব্রিটিশ হাইকমিশন, কানাডিয়ান হাইকমিশন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ডেনমার্কের দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল, ফ্রান্সের দূতাবাস, জার্মান দূতাবাস, ইতালির দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, নরওয়ের দূতাবাস, স্পেনের দূতাবাস, সুইডেনের দূতাবাস এবং সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন রোহিঙ্গারা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।