যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সমর্থনমূলক : মোমেন

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সমর্থনমূলক : মোমেন

বাসস : বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে যারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে ওয়াশিংটন এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য একটি আগাম সতর্কতা জারি করেছে।

বুধবার (২৪ মে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণার প্রতি ঢাকার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নতুন মার্কিন নীতি বরং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

তিনি বলেন, নীতিটি ভালো, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটি বাংলাদেশ সরকারের ওপর কোনও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে নি, যখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক চমৎকার রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা করছেন যে, নতুন মার্কিন ভিসা নীতি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন নিয়ে কোনও সহিংসতা না করতে সতর্ক করবে। কারণ ‘এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্য নয়, বরং বিরোধীদের জন্যও’।

তিনি বলেন, সরকার অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চায় না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুধবার বলেছে যে, তাঁরা বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করবে, যাঁরা নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করবে। দৃশ্যত ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে আসন্ন নির্বাচনকালে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কায় এটি একটি পূর্ব সতর্কতা।

ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ (বুধবার), আমি অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি যা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করবে।

তিনি আরও বলেন, এ নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করলে যে কোনও বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করতে সক্ষম করবে’।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যকে সমর্থন করা’ এবং গভীরভাবে ভিন্ন মেরুতে বিভক্ত দেশটির সরকারপন্থী বা বিরোধী সমর্থকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনের তদারকি করার জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে বলে এই ঘোষণাটি এসেছে এবং তারা বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য গত সপ্তাহে বলেছে, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে কোনও নির্দিষ্ট দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন নয়। 

তবে তাঁরা চায়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন’ সমর্থন করছে এবং নীতিটি সরকার সমর্থক বা বিরোধী সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করবে।

মোমেন বলেন, ব্লিঙ্কেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করলে তাঁর মার্কিন সমকক্ষ তাঁকে সপ্তাহ আগে নতুন ভিসা নীতি সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।

মোমেন তাঁকে পাঠানো ব্লিঙ্কেনের চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এই নীতি বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবৃত প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশি নাগরিক বা সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে ক্ষুন্ণ করলে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। 

মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ভোটারদের ওপর বিশ্বাস রাখে।

ব্লিঙ্কেন তাঁর বুধবারের ঘোষণায় বলেছেন যে, নীতির অধীনে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যাঁরা গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাঁদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি। 

পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি জারি করার পরপরই মোমেন ব্রিফিং করেন। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ‘মার্কিন অভিবাসন ও আইনের অধীনে থ্রিসি বিধান অনুসারে একটি ভিসা বিধিনিষেধ নীতি’ সম্পর্কে মার্কিন ঘোষণার কথা বিবেচনায় নিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার জন্য সকল স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর সরকারের দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এই ঘোষণাকে দেখতে চায়।’ 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার একটি রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা হিসাবে বিবেচনা করে। এ দলের অধিকার রক্ষার জন্য নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রয়েছে। সরকার সব শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সমাবেশ ও সংঘটনের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়। 

পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচনি সংস্কার প্রক্রিয়া সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে অব্যাহত রয়েছে এবং প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে, বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে তালিকাভুক্ত ১০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ভুয়া ভোটারদের বাতিল করতে ফটোভিত্তিক ভোটার আইডি কার্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভোটারদের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা স্থাপনের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার চালু করা হয়েছে। ‘জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং দক্ষতার সঙ্গে তাঁর কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সজ্জিত করা হয়েছে’।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধান এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী সকল নির্বাহী ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের জন্য যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবে সহায়তা করার জন্য নিয়োজিত থাকবে।’

পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে, বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং ভোটের কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই।

এতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।

বিবৃতিতে উন্নয়নের পরিসংখ্যানগত বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, মাথাপিছু দারিদ্র্যহার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যতার হার একই সময়ের মধ্যে ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছে যা ‘আওয়ামী লীগ সরকার পরপর তিন মেয়াদে গত চৌদ্দ বছর নির্বাচিত হওয়ার কারণে অর্জিত হয়েছে’।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সরকার সন্তোষ প্রকাশ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর অব্যাহত অঙ্গীকারের পাশে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছে।’