মশা নিধনে বিটিআই কীটনাশক প্রয়োগ শুরু

মশা নিধনে বিটিআই কীটনাশক প্রয়োগ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : চলমান মশক নিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) কীটনাশক প্রয়োগ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এই কীটনাশক পরিবেশ রক্ষা করে ডেঙ্গুর বাহক এডিস লার্ভা ধ্বংসে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর আওতাধীন গুলশান-২ এর ৪৭ নম্বর সড়ক এলাকায় প্রথমবারের মতো এই কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সেখানে উপস্থিত থেকে ডিএনসিসি মেয়র এ কথা বলেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আজ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। গত ৪০ বছর ধরে আমরা টেমিফস্ট (কীটনাশক) ব্যবহার করতাম মশক নিধনে। কিন্তু আমরা দেখেছি অন্যান্য উন্নত বিশ্ব আজ ব্যবহার করছে বিটিআই কীটনাশক। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন শহরে এটি ব্যবহার করছে, সিঙ্গাপুরে ব্যবহার করছে, মায়ামি সিটিসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এই বিটিআই ব্যবহার করছে। বিভিন্ন দেশে দেখার পর আমরা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে এটা নিয়ে এসেছি। একটি কীটনাশক আনতে সরকারি অনেকগুলো প্রটোকল মেইনটেইন করতে হয়। আমরা সব প্রটোকল মেইনটেইন করে সিঙ্গাপুর থেকে লার্ভা ধ্বংসে কার্যকরী বিটিআই এনেছি। আশা করি, এটি ব্যবহারে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

মেয়র বলেন, বিটিআই পরিবেশ রক্ষা করে। অর্থাৎ এটি যখন আমরা ব্যবহার করছি, এখানে মাছের কোনও ক্ষতি হবে না, জলজ প্রাণীর ক্ষতি হবে না। লেকে যে মাছগুলো আছে, এগুলোর কোনও ক্ষতি হবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ক্ষতিকর লার্ভা ধ্বংস করবে। আমরা অতীতে ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়তাম। কিন্তু এই মাছগুলোকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম না। এখন লার্ভাটা মরবে, গাপ্পি মাছগুলো থাকবে। আবার গাপ্পি মাছগুলো লার্ভা খেয়ে ফেলবে। এর ফলে বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করতে সুবিধা হবে।

মেয়র আরও জানান, ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলের পুরো টিমকে আগামী ৫ দিন ট্রেনিং দিয়ে কীভাবে এটি প্রয়োগ করতে হয়, সেটি শেখানো হবে।

এই বিটিআই ব্যবহারের একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি একটি এলাকায় একবার প্রয়োগ করলে ১০ দিনের মধ্যে সেখানে আর স্প্রে করতে হবে না। এতে আমাদের যে জনবল আছে, আমি আরও অনেক বেশি এরিয়া কাভার করতে পারবো। আগে সপ্তাহে দুবার টেমিফস্ট ব্যবহার করা হতো। অতএব বিটিআই ব্যবহার করে অনেক জায়গা কাভার কর‍তে পারবো। তবে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে আবার সাত দিন পরপর করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি অঞ্চলের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ডগুলোর মশক কর্মীদের প্রশিক্ষণের পর এটি প্রয়োগ করা হবে। আজ ৩, ৯, ১০ এই তিনটি অঞ্চলের কর্মীরা প্রশিক্ষণ নেবেন। ৫ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল অঞ্চলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, পুরো প্রয়োগ প্রক্রিয়াটি আমরা কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখবো। সঠিক পরিমাণে বিটিআই মিশ্রণ হয়েছে কি-না, সঠিক পরিমাণ জায়গায় প্রয়োগ করা হয়েছে কি-না, এগুলো মনিটরিং করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা প্রথম ধাপে ৫ টন বিটিআই এনেছি। এতে তিন মাস চলবে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ভবনের বেজমেন্টে প্রায় ৪৩ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। তাই বেজমেন্টেও বিটিআই প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছি। তবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিকভাবে যদি এটি বাজারজাত করে ওভার দ্য কাউন্টারে বিক্রির ব্যবস্থা করে তাহলে সবাই নিজেদের বাড়িতে ব্যবহার করতে পারবে।

এ সময় অন্যান্যদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, সিঙ্গাপুর থেকে আগত বিটিআই কীটনাশক বিশেষজ্ঞ লি শিয়াং এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান।