মিরপুরে সাকিবের নাটকীয় এক দিন।

মিরপুরে সাকিবের নাটকীয় এক দিন।
ডন প্রতিবেদন : ‘সাকিব নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন? কিছু জানেন?’ গতকাল শুক্রবার (১১ মার্চ) রাত থেকেই সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। দুইদিন আগে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটিতে যাওয়া সাকিব নাকি হঠাৎই মত পাল্টেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ওয়ানডে-টেস্ট দুটিই খেলবেন তিনি। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বোর্ডপ্রধান নাজমুল হাসান ও সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি সে গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগায়। যে গুঞ্জন সত্যতা পায় কিছুক্ষণ পরই। যখন সাকিব নিজেই সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন। বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথমে বিসিবি সভাপতি মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে আসেন। পাঁচ মিনিট পর আসেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস, বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীরা আগে থেকেই ছিলেন। ছিলেন মাহবুব আনাম, ইসমাইল হায়দার ও শেখ সোহেলের মতো আরও কয়েকজন বোর্ড পরিচালক। নাজমুল হাসান ও সাকিবের বোর্ডে আসার খবর শুনে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। সবার মনেই প্রশ্ন—কোন পথে এগোচ্ছে সাকিবের ভবিষ্যৎ? ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল। সাকিব ও নাজমুল হাসান—দুজনই একসঙ্গে বেরিয়ে এলেন বেলা আড়াইটার দিকে। নাজমুল হাসান বৈঠকের কারণ জানিয়ে সাকিবকেই তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব তখন বলেন, ‘পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান) সঙ্গে গত পরশু রাতে, কালও, আজও কথা হয়েছে। আমরা পুরো বছরের পরিকল্পনা করতে পেরেছি। যেহেতু আমি তিনটা ফরম্যাটেই আছি, আমি তিন ফরম্যাটেই সব সময় থাকব। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কোন সময় আমাকে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই এটা হবে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও অ্যাভেইলেবল।’ উৎসুক সাংবাদিকেরা সাকিবের মন্তব্য শেষ হতে না হতেই তাঁর সিদ্ধান্ত বদলের কারণ জানতে চান। কদিন আগেই তো বলেছেন, খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় নেই তিনি, এখন তাহলে কীভাবে খেলবেন? সাকিব উত্তর দিলেন, ‘এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছি। যেহেতু আমার সামনে পরিষ্কার চিত্রটা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গেলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অনেক সময় হয় তো, না? ভিন্ন জায়গায় গেলে মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়। আশা করি, সে রকম কিছু হবে এবং দলের জন্যও ভালো পারফর্ম করতে পারব।’ নাজমুল হাসানও সাকিবের কথার সঙ্গে সুর মেলালেন। সাংবাদিকদের সাকিব-বিতর্ক বন্ধ করার অনুরোধও জানালেন তিনি, ‘পরশু এসে আমাকে সাকিব যে জিনিসটা বলেছে, ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের সবারই কোনো না কোনো সময় এ রকম হয়। মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতেই পারে। আপনারা অনেক কারণ বের করে নিচ্ছেন। এটার জন্য করছে, ওটার জন্য করছে...এ রকম কিছু নয়। সে মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সে নিজেই স্বীকার করেছে। এটা যখন বলেছে, এরপর আর কোনো কথা নেই। আমাদের পুরো সূচি দেখে বলেছে, আমি সব ফরম্যাটে খেলতে চাই।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে সাকিবকে নিয়ে আবার বিসিবি কার্যালয়ে ফিরে যান নাজমুল হাসান। সাংবাদিকদের ভিড় তাতে কিছুটা কমলেও সাকিব ও নাজমুল হাসান মিরপুর না ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন আরও অনেকেই। কিছুক্ষণ পরই সাকিবের নাম লেখা টেস্ট ও ওয়ানডে জার্সি নিয়ে নিচে নেমে আসেন এক বিসিবি কর্মকর্তা। সাকিবের গাড়িতে জার্সি পৌঁছে দিতেই তিনি নিচে নেমেছিলেন। নাজমুল হাসান এর কিছুক্ষণ পরই বেরিয়ে যান। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে এ সময় কিছুক্ষণ কথা বলেন ইসমাইল হায়দার, মাহবুব আনাম ও শেখ সোহেল। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘সাকিব তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছে।’ বেলা পৌনে চারটার দিকে সাকিবও বিসিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্লাইট কখন? এ প্রশ্ন শুনেই সাকিব মুখে রহস্যময় এক হাসি ফুটিয়ে গাড়িতে উঠে যান। পুরো সময়টা বিসিবি কার্যালয়ের দেয়ালের ওপারে কয়েকজন উৎসুক ক্রিকেট সমর্থক সাকিব-নাটকের শেষ পর্ব মঞ্চায়ন হতে দেখছিলেন। তাঁদের একজনের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা, ‘কী হচ্ছে ভাই? শেষ পর্যন্ত সাকিব কি দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছে? তাহলে ছুটির কী হলো?’ উত্তর তো সাকিব মুখে আগেই দিয়েছেন। আর রহস্যময় ওই হাসি? এর অর্থ শুধু তিনিই জানেন।