মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার এড়াতে তাবলিগে

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার এড়াতে তাবলিগে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাড়ে তিন বছর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন, যারা সাত বছর ধরে পলাতক জীবন কাটিয়ে আসছিলেন।

এরা হলো : আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডল ও জাছিজার রহমান খোকা। দুজনেরই বাড়ি গাইবান্ধায়। ওয়াহেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মুগদার উত্তর মাণ্ডায় ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধরা পড়েন ওয়াহেদ মণ্ডল। জাছিজারকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে।

র‌্যাব বলছে, ২০১৬ সালে গাইবান্ধা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এই দুইজন। মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে ওয়াহেদ তাবলিগ জামাতের একটি দলে ভিড়ে নিয়মিত স্থান বদল করতেন। জাছিজার ঢাকাতে ঘন ঘন বাসা পাল্টেছেন।

২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে ওয়াহেদ মণ্ডল, জাছিজার রহমান, আব্দুল জব্বার, রঞ্জু মিয়া ও মোন্তাজ আলীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে।

এর দশ বছর আগে ২০০৯ সালে তাদের নামে মামলা হয়। ২০১৪ সালে সেটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বিচার চলাকালে নিয়মিত হাজিরা দিতেন না আসামিরা। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষে নতুন করে জামিনের আবেদন করা হয়। সেটি নাচক হলে পাঁচজনই যান আত্মগোপনে।

ফেরারী জীবনে মারা যান আব্দুল জব্বার ও রঞ্জু মিয়া। এখনও পালিয়ে মোন্তাজ আলী। আবদুল জব্বার ছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া ওয়াহেদেরই বাবা।

শুক্রবার কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে র‍্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে ওয়াহেদের সংশ্লিষ্টতা ১৯৭০ সালে। একাত্তরে তিনি জামায়াতের গাইবান্ধা সদরের সদস্যসচিব ছিলেন।

র‍্যাব জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়াহেদের বাবা জব্বার ছিলেন গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক। বাবার সঙ্গে ওয়াহেদ গাইবান্ধা সদরে লুটপাটসহ নানা অপরাধ করেছেন।

আসামিদের পলাতক জীবন :
র‌্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, গাইবান্ধা ছেড়ে ওয়াহেদ প্রথমে সাভার এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পাল্টে ফেলেন নাম। পরে তাবলিগের একটি দলে যুক্ত হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতেন।

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তিনি অন্যের নামে তোলা সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। মাঝেমধ্যে গাইবান্ধায় তার পরিবারের সঙ্গে দেখাও করতেন।

আরেক আসামি জাছিজার রহমান খোকা আর্থিকভাবে বেশ স্বচ্ছল ছিলেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। তিনি এক ঠিকানায় বেশিদিন অবস্থান না করার কৌশল নিয়েছিলেন, বাসা পাল্টাতেন ঘন ঘন।