বেনাপোল-ভাঙ্গা মহাসড়ক চারলেন প্রকল্প অনুমোদনে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি

বেনাপোল-ভাঙ্গা মহাসড়ক চারলেন প্রকল্প অনুমোদনে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; মনির হোসেন, বেনাপোল : বেনাপোল-ভাঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জুন মাসের শেষের দিকে যশোরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। শিগগিরই ভূমি অধিগ্রহণ ও ‘ইউটিলিটি’ স্থানান্তরের প্রাথমিক কাজ শুরু করতে পারবে বিভাগটি।

এদিকে, বেনাপোল-যশোর সড়কে বেশকিছু শতবর্ষী গাছ রয়েছে। সড়ক বিভাগ গাছগুলো না রাখার পক্ষে। পরিবেশবাদীরা ‘হেরিটেজ’ হিসেবে এসব গাছ রেখে দিতে চান। আদালতের আদেশও পরিবেশবাদীদের পক্ষে। ৬৯০টি মৃত-অর্ধমৃত ও অতি পুরাতন গাছের কারণে সড়কটি ‘ফোর লেন হওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে' বছরের পর বছর। পরিবেশবাদীরা বলছেন, একটি গাছ কাটলে ১০টি গাছ লাগানো উচিত। কিন্তু আমরা তা করি না। এ কারণেই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাঁরা আরও বলছেন, চারলেন মহাসড়ক করতে হলে যতোটুকু গাছ রাখা যায়, ততোটুকু রেখে করা উচিত। প্রয়োজনে যেখানে বেশি গাছ, সেগুলো না কেটে ২ লেন আলাদা, ২ লেন আলাদা করে করা যায়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এর নজির রয়েছে এবং তাঁদেরকে অনেক পরিবেশবান্ধব হতে দেখা যায়।

জানা গেছে, ৩৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার বেনাপোল-যশোর মহাসড়কটি সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে যাওয়া-আসা ও ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির একমাত্র মহাসড়ক। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক চারলেন মহাসড়কে রূপান্তরের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। গাছ কেটে সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে বাধ সাধেন পরিবেশবাদীরা। সড়কের পাশের ‘বৃক্ষগুলো ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশ সংরক্ষণ করে’ জানিয়ে পরিবেশবাদীদের পক্ষে একটি রিট পিটিশন করা হয় গাছ না কাটার জন্য। এরপরই আদালত গাছ কাটার বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন।

ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকের সভায় বেনাপোল-ভাঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প পাস হয়েছে। বেনাপোল-যশোর সড়ক বাদে অন্যান্য স্থানে কাজও শুরু হয়ে গেছে। যশোর অংশের কাজ আটকে আছে গাছে। স্থানীয় সড়ক বিভাগের কাছে এ বিষয়ে সুনিদিষ্ট কোনও নির্দেশনা নেই।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের এস্টেট আইন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে  বেনাপোল যশোর-সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে দীর্ঘ প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সহকারী বন সংরক্ষক অমিত মণ্ডল, উপ বন সংরক্ষক আবুল কালাম ও জি এম কবির, বিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুণ্ডু, সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বাঙলার কাগজকে জানান, আমরা ইতিমধ্যে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির ডিপিপি পাঠিয়েছি। যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। উন্নয়নের স্বার্থে এবং চারলেন করতে এই গাছ অপসারণ প্রয়োজন বলেই বিভাগের আইন কর্মকর্তা মতামত দিয়েছেন। বিভিন্ন সভায় আমরা এ সব বিষয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। গত নভেম্বরেও কোর্টে এ ব্যাপারে শুনানি ছিলো, আর কোনও ফল পাই নি বা জানা যায় নি।

যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাঙলার কাগজকে জানান, গাছগুলি ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনক এবং প্রাণহানির কারণ হচ্ছে। বেশিরভাগ গাছই এখন অকেজো ও অপ্রয়োজনীয়। সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও জানমালের নিরাপত্তায় সেগুলির অপসারণ আমরাসহ জড়িত সব পক্ষই বলছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশই সব পথ বন্ধ করে রেখেছে।