ডন প্রতিবেদক, বগুড়া : বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামে শিশু বাউল শিল্পী মেহেদী হাসানকে (১৬) ঘুম থেকে ডেকে তুলে মারধর ও মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ তিন মাতব্বরকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার ওই তিনজনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তারা হলো : উপজেলার গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও জুড়ি মাঝপাড়ার বাসিন্দা মেজবাউল ইসলাম (৫২), একই গ্রামের শফিউল ইসলাম খোকন (৫৫) এবং তারেক রহমান (২০)। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
শিবগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর্থিক অনাটনের কারণে পড়াশোনা করতে পারেন নি। এরপর পার্শ্ববর্তী ধাওয়াগীর গ্রামের মতিন বাউলেরসঙ্গে পরিচয় হলে তিনি তাঁরসঙ্গে চলাফেরা শুরু করে। মেহেদী হাসান কয়েক বছর ধরে মতিন বাউলেরসঙ্গে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। বাউল শিল্পী হওয়ার কারণে মেহেদী হাসান সাদা লুঙ্গি, সাদা ফতুয়া এবং সাদা গামছা ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি মাথায় বাবরি (লম্বা) চুল রাখত। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মেহেদী হাসানের পোশাক এবং মাথার চুল নিয়ে বিভিন্ন সময় অশালীন মন্তব্য ও কটাক্ষ করতো। এসবের প্রতিবাদ করায় গ্রেপ্তার তিনজনসহ পাড়ার আরও কয়েকজন ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে মেহেদীর বাড়িতে যায়। তারা মেহেদীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জোর করে তার মাথা ন্যাড়া করে দেয়। বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। মাতব্বররা তাকে বাউল গান ছেড়ে দিতে বলে এবং চুল আবার বড় করলে গ্রামছাড়া করার হুমকি দেয়। ঘটনার পর থেকে লজ্জা ও ভয়ে বাড়ির বাইরে যান নি মেহেদী।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার সংবাদ পেয়েই বাউল শিল্পীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। তার মুখে বিস্তারিত শুনে অভিযান চালিয়ে রাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও দুজন পলাতক রয়েছে। শিল্পীর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে মোবাইল ফোনে বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। গ্রেপ্তারকৃত তিন জনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মেহেদী হাসান বাদি হয়ে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে থানায় মামলা করেন।
বগুড়া বাউল গোষ্ঠীর সভাপতি আবু সাঈদ সিদ্দিকী জানান, মেহেদীর ঘরে খাবার নেই বলেই তিনি বাউল গান পরিবেশন করে উপার্জন করতেন। তাঁর চুল কেটে দেওয়ায় বাউল শিল্পীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কঠিন শাস্তি দাবির পাশাপাশি সব বাউল ও সাংস্কৃতিক কর্মীর নিরাপত্তা প্রদানে সহযোগিতা করার কথা বলেন তিনি।