প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০৪ কোটি টাকা দিলো ৪৫ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান : দেশের মানুষ পাশে ছিলো বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০৪ কোটি টাকা দিলো ৪৫ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান : দেশের মানুষ পাশে ছিলো বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : দেশের জনগণকেই সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি জানান, দেশের মানুষ পাশে ছিলো বলেই বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থায়ন বন্ধ করার পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে তা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

সোমবার (২৭ জুন) বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে দেশের ৪১টি ব্যাংক, একটি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা অনুদান দেয়।

বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীরা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন ব্যবসায়ী অনেকেই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হবে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই রেল, নৌপথ ও সড়কপথে যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। সমগ্র বাংলাদেশেই ব্রিজ এবং উন্নত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি নদীগুলো ড্রেজিং করে নৌপথও সচল করা হচ্ছে। নতুন নতুন রেললাইনও করা হচ্ছে। এতে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাড়ছে।

‘সরকারের প্রচেষ্টা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; যাতে বিজয়ী জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে এ দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে। পাশাপাশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় এবং কৃষি জমি রক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখে ১ শটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বলা হতো, বাংলাদেশে গ্যাস বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে তা নেই, তারপরও আমরা আমাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। এলএনজি আমদানি করে শিল্প কারখানা যাতে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে চলে। এতে মানুষের কোনও হাত থাকে না। সিলেট বিভাগে পরপর তিনবার বন্যা হয়। হাওর অঞ্চলে আমাদের কিছু ফসলও নষ্ট হয়েছে। পানিটা নেমে আসার সময় নেত্রকোনা থেকে শুরু করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এখন মানুষের দুর্ভোগ কম। কিন্তু মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।’

ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, কোনও দুর্যোগ-দুর্বিপাক হলেই আপনারা নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন এবং আর্তমানবতার সেবায় পদক্ষেপ নেন এবং তাঁদের জন্য কিছু করেন। এটা বিরাট মানবিক গুণ।

অনুষ্ঠানে ৪৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করে। এগুলো হলো : সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, বিডিবিএল, ইডকল ও বিআইএফএফএল।