প্রধানমন্ত্রী : মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

প্রধানমন্ত্রী : মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার (১৫ জুন) জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, মেগা প্রকল্পগুলো যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে বলে বাস্তবায়নে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না।

তিনি বলেন, ‘মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই; কারণ সেগুলি নেওয়ার আগে যথাযথ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়েছিলো। এ কারণে প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’

ময়মনসিংহ-৮ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান নিয়ে, যেগুলোর ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনামূলকভাবে খুবই কম এবং দীর্ঘ গ্রেস পিরিয়ডের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া উন্নয়ন সংস্থাগুলির ঋণ তহবিল ছাড়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও জটিলতা লক্ষ্য করা যায় নি।

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পসহ ১৬টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় অনেক ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প ও ব্যবসার পাশাপাশি বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং, আসলে প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পরিবর্তে দেশের অগ্রগতি সরাসরি ত্বরান্বিত হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ছাড়া যেহেতু প্রকল্পগুলো (পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প ব্যতীত) বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন পাচ্ছে, সেহেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট আমদানি ব্যয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যালেন্সের ওপর কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।’

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হচ্ছে।

নোয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন এবং আইনের অধীনে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, একটি টেকসই ও সংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে দেশের বয়স্ক ব্যক্তিদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা-১১ আসনের ট্রেজারি বেঞ্চের আইনপ্রণেতা এ কে এম রহমতুল্লাহর অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির সুযোগ নিয়ে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবৈধ মজুদ ও মূল্যবৃদ্ধির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার অবনতি ঘটে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। আর বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

‘কিন্তু সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে’ বলেই উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি এই সুবিধা নিয়ে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অবৈধ মজুদ এবং মূল্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, মূল্যবৃদ্ধি, অবৈধ মজুদদারি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

পিরোজপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহ প্রাক-কোভিড পরিস্থিতির স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছুটা কমে ১৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে নি, বরং রেমিট্যান্স প্রবাহ কোভিড-পূর্ব সময়ের স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসতে শুরু করেছে।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের আরেক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে ৮৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সার্কুলার রোড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।