প্রধানমন্ত্রী : ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী : ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বাসস : প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪’র নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করেছে, ২০১৮’র নির্বাচনের আগে করেছে, আবার এখন নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে- এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বুধবার (৩ আগস্ট) গণভবনে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেলকে (১০ বছরের ছোট্ট) পর্যন্ত খুন করলো, আর সেই পরিবার থেকে বেঁচে এসে সরকারে আসলাম সাফল্য এনে দিলাম। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম। এটা অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি, তাদের তৎপরতা আছে। তাদের খবরও আমি রাখি, আমারতো অচেনা কেউ নাই। তারা তাদের চক্রান্ত করে যাক। আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেবো।

তিনি করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনকে কেন্দ্র করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃচ্ছ্রতা সাধনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই স্যাংশনের ফলে আমি জানি না, কারা লাভবান হচ্ছে। এই যুদ্ধ আর স্যাংশনের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।

দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন খুঁজে বের করায় সরকারের পাশাপাশি তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদেরও দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, তারপরেও আমি আলাদাভাবে খবর নিচ্ছি। রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগে আমাদের কৃষক লীগ এবং আওয়ামী লীগের যে নেতাকর্মী রয়েছে, তাঁদেরকে বলেছি- কোথায় কে ভূমিহীন, গৃহহীন রয়েছে, তাঁদের খোঁজ করে তালিকা করতে হবে। 

‘এক একটা এলাকা ধরে আমাকে তালিকা দিতে বলেছি, যাতে কেউ বাদ না যায়।’ 

‘আমরা তাঁদের ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবো। কেননা বাংলাদেশে একটা মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।’

এ সময় আওয়ামী লীগ সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁঁছে দিলেও বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কেবল আমরাই নয়, এখন ইউরোপের দেশগুলো থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করছে। কাজেই আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি, ভবিষ্যতে যেনো বিপদে পড়তে না হয়। 

‘তা ছাড়া ১ কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দিচ্ছি অর্থাৎ কোনও মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে, সেটাই আমাদের চেষ্টা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করে নি এবং করবেও না। আর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখলকারী, তারাতো ক্ষমতার চেয়ারটা কীভাবে দখলে রাখবে, ওই চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকে।

শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, দেশব্যাপী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রম বিস্তারে বরাবরের মতো তাঁর সরকার এবং তাঁর ব্যক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে আগামী ৪ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা আইএফআরসি’র সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসর) এ টি এম আব্দুল ওয়াহাবকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার খুনিদের এক সময় তাঁদের ধানমন্ডির বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিলো উল্লেখ করে জাতির পিতার এ কন্যা বলেন, খুনি নূর, ডালিম, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক প্রায়ই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আমাদের বাসায় আসতো।

তিনি বলেন, তারা আমার বাবা, মা, আমার পরিবারের সকল সদস্য এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দেশ ও এর জনগণের জন্য কোনও কল্যাণ করতে পারে নি, বরং গণমানুষের ভাগ্য অন্ধকার যুগে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

আবেগ জড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ দেশে রেডক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানবতার কল্যাণে। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর সেই রেডক্রসেরই এক টুকরো কাপড়কে কাফন বানিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছিলো। 

প্রধানমন্ত্রী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পুরোনো মর্যাদা ফিরিয়ে আনাসহ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে আধুনিকীকরণের একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন।

তিনি রেড ক্রিসেন্টের জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো নতুন করে করার এবং কমিটিকে কার্যকর করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসর) এ টি এম আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান নূরুর রহমান, ট্রেজারার এম এ সালাম, মহাসচিব কাজী সফিকুল আজম, আরমা দত্ত এমপি এবং মঞ্জুরুল ইসলামসহ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।