প্রধানমন্ত্রী : আ.লীগ সব সময় ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে, পেছনের দরজা দিয়ে নয়।

প্রধানমন্ত্রী : আ.লীগ সব সময় ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে, পেছনের দরজা দিয়ে নয়।
বাসস : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনই ক্ষমতা দখলের জন্য পেছনের দরজা ব্যবহার করে নি, বরং তাঁরা সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসে নি বা এটি কোনও মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে তৈরি করা কোনও সংগঠনও নয়।’ প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার (৭ মে) বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগই করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদেরই দাবি ছিলো, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটা তালিকা এবং এখনকার ইভিএম। অর্থাৎ মানুষ শান্তিতে ভোট দেবে সঙ্গে সঙ্গে ভোটের রেজাল্ট পাবে। যাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা বলবৎ থাকবে। তিনি বলেন, মানুষ যদি আমাদের ভোট দিতে না চায়, দেবে না। আমরা আসবো না ক্ষমতায়। কিন্তু জনগণের ভোট প্রয়োগ সত্ত্বেও অতীতে বারবার চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনা থেকে দূরে রাখা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন এবং এই সংগঠন মাটি ও মানুষের জন্যই কাজ করে তা আজকে প্রমাণিত। ‘ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় বসানোয় দলের পক্ষে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।’ তিনি বলেন, এর ফলে (আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে) গত ১৩ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণ ও এই মাটির দল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান আর্মি রুলস এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে এ দেশে ভোট কারচুপির সংস্কৃতিটা শুরু করে। আর এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সব সময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ভোটের পার্সেন্টেজের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনো পেছনে ছিলো না। কিন্তু বার বার ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর শত্রুরা কখনো ক্ষতি করতে পারে না, যদি ঘরের শত্রু বিভীষণ না হয়; এটা হলো বাস্তবতা। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটা সব সময়ই দেখা গেছে। যেটা সব থেকে দুর্ভাগ্য ও দুঃখজনক বিষয়। ‘শত ষড়যন্ত্রের মাঝেও আওয়ামী লীগ এগিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করা আর ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য কি কাজ করবো সেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই আমরা কাজ করেছি। কেননা জাতির পিতার যে ইচ্ছে এ দেশের গরীব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো- তা আমাদের পূরণ করতে হবে। ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সরকারের ঘরবাড়ির পাশাপাশি গৃহহীনদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় পরিবারে পাঁচ জন সদস্য ধরা হলেও প্রায় ৪৫ লাখ লোককে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছে। কোথাও খাস জমি না পেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে এখন জমি কিনেও ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজ চলমান রয়েছে এবং ঈদের আগে আমরা প্রায় ৩৩ হাজার ঘর উপহার দিয়েছি। ‘জুলাই মাসে আরও ৩৫ হাজার ঘর আমরা দিতে পারবো। আর বাকি থাকবে ৪০ হাজারের মতো। সেটা করতে পারলে ভূমিহীনদের যে হিসাব আমরা নিয়েছিলাম, সে অনুযায়ী আমরা পুনর্বাসন করতে পারবো।’ তিনি এ সময় তালিকার বাইরেও কোথাও কোনও গৃহহীন বা ভূমিহীন-গৃহহীন রয়েছে কি-না, তা খুঁজে বের করতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। ‘তাহলে সরকার তাঁদের পুনর্বাসন করবে। কেননা সরকার চায় বাংলাদেশে একজন মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।’ ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যাদেরকে যুদ্ধ করে আমরা পরাজিত করেছি, সেই পরাজিতদের পদাঙ্ক আমরা অনুসরণ করবো না। যদিও জাতির পিতাকে হত্যার পর সে রকম একটি মডেল হিসেবেই এ দেশকে তৈরি করার ষড়যন্ত্র হয়। ‘আমরা আমাদের স্বকীয়তা-ঐতিহ্য কৃষ্টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো।’ ষড়যন্ত্রকারিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় যেতে চান, কিন্তু জনগণের ভোট চাইতে পারেন না বা সে সামর্থ্য যাদের নেই, সংগঠন করার সামর্থ নেই কিন্তু আকাঙ্ক্ষা আছে, তারাই চাইবে এ দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। ‘কারণ সামরিক জান্তার পকেট থেকে ক্ষমতায় বসে যে সমস্ত দল গঠন হয়, তারা গণতন্ত্র দিতেও পারে না, চর্চাও করে না, বোঝেও না।’ ‘যারা খুনের রাজনীতি করে, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করে, তাদের সেই রাজনীতি মানুষকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নেতৃত্ব শূন্যতার দিকে আবারো ইঙ্গিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দলেরতো একটা নেতৃত্ব থাকতে হয়। তাদের নেতৃত্ব কোথায়, দুজনেই তো সাজাপ্রাপ্ত। একজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। ‘আরেকজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। এই নেতৃত্ব নিয়ে চলছে বিএনপি। আর এরসঙ্গে ডান, বাম, অতি বাম এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনেকে গাঁটছাড়া বাঁধতে চেষ্টা করছে। একটা অলটারনেটিভ থাকা উচিত। তারা যদি সুসংগঠিত হতে পারে, হোক। তবে, তারা কেবল দেশের বদনাম বিদেশিদের কাছে করে বেড়ায়, যেনো তাদের আকাঙ্ক্ষা বিদেশ থেকে কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এখনকার বাংলাদেশ আর সেটা নয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়া এবং ঈদ শেষে পুনরায় মানুষ নির্বিঘ্নে ফিরতে পারায় তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষের একটা চমৎকার বিষয় যে, যেখানেই থাকুক ঈদে বাড়ি যায় এবং আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে ঈদ উৎসব উদ্‌যাপন করে। আর এই উৎসব উদ্‌যাপনের মানসিকতাটা পৃথিবী থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। ‘কিন্তু আমাদের বাঙালি সমাজে সেটা এখনো রয়েছে এবং সবাই ছুটে যায় নিজেদের মাটির টানে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে গ্রামে যেমন অর্থ সরবরাহটা বাড়ে, তেমনি মানুষের স্বচ্ছলতাও বৃদ্ধি পায় এবং গ্রামেরও কেনা-বেচাটা যথেষ্ট ভালো হয়। আর আল্লাহর রহমতে এখন আর সে দিন নেই যে, দারিদ্র্যতার জন্য মানুষ ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারে না। আর এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং চাঙ্গা করে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য অর্থাৎ তৃণমূল থেকেই উন্নয়ন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যকে বলবো আপনাদের নিজ এলাকার যেমন খোঁজ রাখতে হবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এই সংগঠনকে যাঁরা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে, তাঁদেরকেও সেভাবে তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ দেশকে ভালোবেসে দেশের মানুষকে ভালোবেসে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করলে পরে, সে নেতৃত্বই সাফল্য আনতে পারে। রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কি? কোথায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি? তাঁর সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যতা ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এবারের সেন্সাস রিপোর্টেও আপনারা দেখবেন এই দারিদ্র্যতা বা হতদরিদ্র এমনভাবে কমে গেছে যে বিশ্বও বিস্মিত হবে। ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জিনিসের মুল্যবৃদ্ধি হলেও তাঁর সরকারের কার্যকর ও তড়িৎ পদক্ষেপে দেশে সেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে নি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে ১০ শতাংশ এবং ইউরোপের কোনও কোনও দেশে ১৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। আমেরিকার ধারণা, তাঁদেরও আগামীতে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে। ‘জিনিসপত্র, ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছেনা। লন্ডনে তেল কেনায় রেশনিং সিস্টেম চালু হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধের ফলে পরিবহন ভাড়া যেমন বেড়েছে, তেমনি আমদানির ওপরও বিরূপ একটা প্রভাব পড়েছে। ‘সবকিছু আমরা উৎপাদন করতে পারি না- কিছু কিছু দ্রব্য বাইরে থেকে আনতে হলেও তাঁর সরকার অনেক কিছুরই এখন দেশে উৎপাদন শুরু করেছে। যেমন পেঁয়াজের কান্না (অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি) আর কাঁদতে হবে না।’ ‘দেশে এক সময় ভালো বাদাম তেল হতো, তা দিয়েই ভাজা-পোড়াটা হতো’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভালো সরিষা ও তিল উৎপাদন হচ্ছে এবং ধানের কুড়া থেকেও তেল হচ্ছে জানিয়ে ভোজ্যতেলের জন্য দেশেই কি ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়, সেজন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেই উল্লেখ করেন। তিনি এ সময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কেননা বিশ্বব্যাপী যে মন্দা, তা আরও বাড়তে পারে এবং আমাদের দিকেও আসতে পারে। কাজেই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। তাঁর সংগঠন নিয়মিত সম্মেলনের আয়োজন করে এবং আবারো সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সংগঠনের ঘোষণাপত্রটাকে সময়োপযোগী করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই আগের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।