পরীক্ষামূলক ফাইভজি চালু করবে টেলিটক

পরীক্ষামূলক ফাইভজি চালু করবে টেলিটক
ডন প্রতিবেদন : আগামি বছরই দেশে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা ফাইভজি চালুর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক শুরুতে রাজধানির ২০০টি স্থানে পরীক্ষামূলক ফাইভজি সেবা চালু করবে। প্রথম ধাপে ১ লাখ গ্রাহককে পাঁচটি সেবার আওতায় আনতে চায় টেলিটক। এ পরিষেবা দিতে আড়াই শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে অপারেটরটি। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, গণভবন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থানা ও বেশকিছু বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার গ্রাহক ফাইভজির আওতায় আসবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট (১০০ এমবিপিএস) গতির ইন্টারনেট সেবা পাবেন তাঁরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি সুদান ও উগান্ডার মতো দেশের চেয়েও কম। ইন্টারনেটে গতির হিসাবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ দেশের মধ্যে ১৩৫তম। বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু আফগানিস্তান ও ভেনেজুয়েলা। ইন্টারনেট অ্যাকসেস ও পারফরম্যান্স অ্যানালিসিস কোম্পানির তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ডাউনলোডের গতি সেখানে ১৯৩ এমবিপিএসের বেশি। আর বাংলাদেশে এর গতি ১২ দশমিক ৪৮ এমবিপিএস। গ্রাহকদের এবার কমপক্ষে আট গুণ বেশি গতি দিতে চায় টেলিটক। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘পরীক্ষামূলক ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে চলতি বছরই ফাইভজির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। টেলিটক ফাইভজি নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছে। এজন্য শুরুতে ঢাকায় কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হবে।’ ‘এটি শেষ হলে সারাদেশের জন্য বড় প্রকল্প নেওয়া হবে। একইসঙ্গে সারাদেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।’ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব বলছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। জুলাই শেষে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখে। এরমধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১১ কোটি ৩৬ লাখ। আর ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখের কিছু বেশি। টেলিটক বলছে, দেশের প্রায় ৫৬ শতাংশ মানুষ মোবাইল সেবার আওতাভুক্ত। এদেরমধ্যে ২৮ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোনে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশ ও কিছু উন্নয়নশীল দেশে ফাইভজি সেবা চালু হয়েছে। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি দেশব্যাপি চালুর আগে স্বল্প মাত্রায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা প্রয়োজন। এমন বাস্তবতায় রাষ্ট্রীয় মোবাইল কোম্পানি হিসেবে টেলিটক ঢাকার উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, রমনা ও শাহবাগের মতো কিছু এলাকায় সীমিত আকারে ২০০টি এজি বিটিএল স্থাপনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্কে বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষামূলক পাঁচটি প্রযুক্তি চালুকরণ’ নামে এই প্রকল্পে খরচ হবে ২৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। এ বছর শুরু হয়ে আগামি বছরের ডিসেম্বরেরমধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। টেলিটকের প্রকল্প প্রস্তাব পেয়ে তা যাচাই-বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন বলছে, এ প্রকল্পে বিশদ কোনও সমীক্ষা হয় নি। ফাইভজি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক কারিগরি প্রযুক্তি। এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করার আগে ইন-হাউজ সমীক্ষার পরিবর্তে এ বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ ও কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তৃতীয় কোনো পক্ষ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। ফাইভজির আগে শক্তিশালী ফোরজি সেবা দেয়া উচিত জানিয়ে কমিশন আরও বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে টেলিটকের ফোরজি সেবা শুরু হলেও এর কাভারেজের আওতায় এসেছে শুধু বিভাগীয় এবং জেলা শহরগুলো। এ ক্ষেত্রে ফাইভজি সেবা শুরু করার আগে ফোরজির কাভারেজ এরিয়া আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ফাইভজি প্রযুক্তিনির্ভর টেলিকম যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে গিয়ে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হবে কি না, তা পরীক্ষা করাও দরকার। কমিশন আরও বলছে, সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফাইভজি প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারবে না। এটি ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ফাইভজি উপযোগী মোবাইল ডিভাইস থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার সুবিধাভোগীদের আনুমানিক কত শতাংশের কাছে ফাইভজি উপযোগী মোবাইল ডিভাইস আছে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। অন্যান্য মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সীমিত ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন ছাড়া ফাইভজি প্রযুক্তি গ্রহণ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, সে বিষয়টিও আলোচনার বিষয়। এর আগে গত মাসে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত ও অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ বলেন, ‘ঢাকার অন্তত ২০০টি স্থানে ফাইভজি সেবা চালুর জন্য টেলিটকের একটি প্রকল্প প্রস্তাব আগস্ট মাসে আমরা পেয়েছি। আমরা সেটা যাচাই করছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকায় এ সেবা চালু হবে।’