নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার : ৪ জন ৩ দিন করে রিমান্ডে।

নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার : ৪ জন ৩ দিন করে রিমান্ডে।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সদর থানার ওসিকে (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার ৪ আসামির ৩ দিন করে রিমান্ডও মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ওই লাঞ্ছনার ঘটনায় সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরকে প্রত্যাহার করে খুলনায় রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়েছে। নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় এ তথ্য বাঙলা কাগজ ও ডনকে নিশ্চিত করেছেন।

আজ রোববার (৩ জুলাই) সকালে প্রবীর কুমার রায় বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, খুলনার ডিআইজি (উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক) কার্যালয় থেকে তাঁকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহামুদুর রহমানকে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

৪ আসামির ৩ দিন করে রিমান্ড : এদিকে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর অন্যতম মূলহোতা রহমতুল্লাহসহ ৪ আসামির ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ রোববার (৩ জুলাই) দুপুরে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন সদর আমলি আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা।

এর আগে নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা পরানোসহ শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানো এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিন বাদি হয়ে গত সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ জুতার মালা দেওয়ায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

এদিকে কলেজ অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় একই প্রতিষ্ঠানের আক্তার হোসেন টিংকু নামের এক শিক্ষককে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অচীন কুমার চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজ শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শনিবার (২ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার দিকে জেলা প্রশাসকের নিকট ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী।