দুর্বল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অবহিত করতে হবে তারল্য পরিস্থিতি

দুর্বল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অবহিত করতে হবে তারল্য পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত এবং বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষক বসানো ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সব সভায় এখন থেকে নগদ প্রবাহ ও তারল্য পরিস্থিতি জানাতে হবে। এক সভা থেকে আরেক সভার মধ্যে ঋণ আদায়ের অগ্রগতি স্মারক আকারে উপস্থাপন করতে হবে। একক গ্রাহকের ঋণসীমার নির্দেশনা যথাযথভাবে মানতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সরাসরি বিশেষ প্রতিবেদন দিতে হবে।

সম্প্রতি ছয়টি দুর্বল ব্যাংকের সমন্বয়ক ও আটটি ব্যাংকে নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কয়েকটি ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণে (সিআরআর) ব্যর্থতা, তারল্য সংকট, একক গ্রাহকের ঋণসীমার নির্দেশনা অমান্য করে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়াসহ ব্যাংক খাতের বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সম্প্রতি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পরিপালনের জন্য পরে গভর্নরের স্বাক্ষরে প্রতিবেদন আকারে সব সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৪ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে আলাদাভাবে তদারকির ঘোষণা দেন। আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ রাখতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। উচ্চ খেলাপি ঋণ, ঋণ আমানত অনুপাতসহ চারটি সূচকের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ছয়টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে আলাদাভাবে সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল, বাংলাদেশ কমার্স, পদ্মা, এবি, ওয়ান ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন করে নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রতিটি ব্যাংকের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া বেনামি ঋণের কারণে সঙ্কটে পড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সম্প্রতি পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে। আগ থেকেই রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে পর্যবেক্ষক রয়েছে। এসব ব্যাংকে নানা অনিয়ম ঘটেছে। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির বেশিরভাগই এসব ব্যাংকে।

কার্যকর তদারকির মাধ্যমে ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব দূর করা সম্ভব বলে সভায় মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সুশাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরেন সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও ঋণ নিয়মাচারের পূর্ণাঙ্গ পরিপালন নিশ্চিত করতে সবাইকে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলেন।

ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যথাযথভাবে ঋণ ঝুঁকি মূল্যায়ন, প্রযোজ্য নীতিমালা, নিয়মাচার ও ব্যাংকিং রীতিনীতি ছাড়া যাতে ঋণ অনুমোদন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক সভা থেকে আরেক সভার মধ্যবর্তী সময়ে ঋণ আদায়ের অগ্রগতি-সংক্রান্ত স্মারক পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করতে হবে। প্রতি সভায় নগদ প্রবাহ বা তারল্য পরিস্থিতি বিষয়ে স্মারক উপস্থাপন করতে হবে। বৃহদাঙ্ক ঋণ ও একক গ্রাহক ঋণসীমা-সংক্রান্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়মিত প্রতিবেদন দিতে হবে। গুরুত্ব বিবেচনায় তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।