দুঃখজনক : ৩ জা মারা গেলেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে!

দুঃখজনক : ৩ জা মারা গেলেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নারায়ণগঞ্জ : বিমলা রানী ঘোষ বাড়ির সামনে গলিতে কাপড় ধোয়ার কাজ করছিলেন। সেখানে বাড়ির কলাপসিবল গেট ধরার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে গিয়ে বিমলাকে তুলতে যান তাঁর বড় জা সোনাই ঘোষ। ঝটকা লেগে তিনিও ছিটকে পড়েন। এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারেন না। জ্ঞান ফিরলে জানতে পারেন একে একে তাঁর তিন জার মৃত্যু হয়েছে।

সোনাই ঘোষ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা পাঁচ জা ছিলাম। দেড় বছর আগে বড় জা মারা যায়। আমরা চার জা বোনের মতোই ছিলাম। হাসি-আনন্দ, সুখ–দুঃখ সবকিছু একসঙ্গে ছিলাম। আমাকে একা ফেলে ওরা তিনজন চলে গেল—’ এ কথা বলতেই তাঁর চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে।

আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন দেওভোগ আখড়া এলাকার রণজিত ঘোষের স্ত্রী বিমলা রানী ঘোষ (৫৩), নিখিল ঘোষের স্ত্রী বাসন্তী রানী ঘোষ (৩৮) ও দীপক ঘোষের স্ত্রী মনি রানী ঘোষ (৪২)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকায় ২৭ নম্বর লক্ষ্মীনারায়ণ বালক-বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে থান কাপড় ব্যবসায়ী তিন ভাই রণজিৎ, নিখিল ও দীপক নিজেদের দোতলা টিনশেড বাড়িতে বসবাস করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃষ্টির সময় বৈদ্যুতিক তারের লিকেজ থেকে ওই বাড়ির কলাপসিবল গেট বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। এ সময় মেজ ভাই রণজিতের স্ত্রী বিমলা রানী ঘোষ বাড়ির সামনে স্নান ও কাপড় ধোয়ার কাজ করছিলেন। হঠাৎ তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সড়কে পড়ে যান।

বিমলার চিৎকারে তাঁকে বাঁচাতে ছুটে যান বড় জা রবি ঘোষের স্ত্রী সোনাই ঘোষ। তিনি বিমলা রানীকে বাঁচাতে গেলে ঝটকা গেলে সড়কে পড়ে যান। তাঁদের চিৎকারে বাড়ির ভেতর থেকে বাসন্তী রানী, মনি রানী বেরিয়ে এলে তাঁরাও বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। বিদ্যুৎ বন্ধ করার পর আশপাশের লোকজন তিনজনকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কর্মকর্তারা এসে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী মৃত তিন জাকে দেখতে যান। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

নিখিল ঘোষ বলেন, সকালে তাঁরা তিন ভাই ব্যবসায়িক কাজে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। দুপুরে খবর পান বাড়িতে তাঁর স্ত্রীসহ আরও দুই ভাইয়ের স্ত্রী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের লিকেজ থেকে বিদ্যুতায়িত হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, একটি দুর্ঘটনায় তিনটি পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ বা অন্য কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, বৃষ্টির ঝোড়ো বাতাসে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে কলাপসিবল গেটের ওপরে পড়ে ছিল। ওই সময় একে একে তাঁরা তিনজন বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মৃত নারীদের পরিবার ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারাও লিখিতভাবে জানিয়েছেন তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই, এটি নিছক দুর্ঘটনা। লাশগুলো ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।