নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তেল নিয়ে তেলেসমাতি চলার অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ মানুষ। খুচরা দোকানিরা বলছেন, তাঁরা ডিলারের কাছে চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না। আর ডিলারেরা বলছেন, কোম্পানি তাঁদের তেল সরবরাহ করছে না। আর কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে মুখ খোলা হচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার (৬ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে সয়াবিন তেল নেই। কিছু দোকানে এক বা দুই লিটারের বোতল স্বল্প পরিমাণে পাওয়া গেলেও দাম বেশি। আর পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়াই যাচ্ছে না।
ঈদুল ফিতরের আগে থেকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে এমন গুজব বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর ব্যবসায়ীরা তেল ‘গুদামে লুকিয়ে রাখে’। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দোকানের ভেতর লুকিয়ে রাখা কয়েক হাজার বোতল উদ্ধার করা হয়।
অথচ ঈদের পরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগান থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগ থেকেই তেল পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে কারওয়ান বাজারে এসেছি। এখানেও তেল পাচ্ছি না।’
এদিকে কারওয়ান বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরেও তেলের দেখা মেলে নি। হাজি মিজান এন্টারপ্রাইজের এক বিক্রেতা বাঙলা কাগজ ও ডনের কাছে দাবি করেন, ‘ঈদের দুইদিন আগ থেকেই তেল নেই। ক্রেতা তেল কিনতে আসছেন, কিন্তু আমরা দিতে পারছি না।’
মাসুদ জেনারেল স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর দোকানে সয়াবিনের এক লিটারের বোতল আছে। কিনতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, ‘এটা বাসায় ব্যবহারের জন্য রেখেছি। বিক্রি করা যাবে না। তাহলে ডিসপ্লে রেখেছেন কেন-এমন প্রশ্নের তিনি কোনও উত্তর দেন নি।’ তবে কুমিল্লা জেনারেল স্টোরে গিয়ে দেখা মিললো সূর্যমুখী তেল। ৫ লিটার সূর্যমুখী তেলের দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটের খুচরা দোকানিদের ভিড়। এখানে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে পুষ্টি তেল বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ পাইকারি দরে পুষ্টি পাঁচ লিটারের বোতল ৭৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দোকানিরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না। কেউ পাঁচ লিটারের দুই কার্টন তেল চাইলে তাঁকে দেওয়া হচ্ছে এক কার্টন। (২০ লিটারে এক কার্টন)।
মেসার্স ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ থেকে খুচরা ক্রেতাদের তেল দেওয়া হচ্ছে না। আবার মার্কেটের যেসব খুচরা ব্যবসায়ী পাইকারি দরে তেল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাও খুচরা বিক্রি করতে চাইছেন না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ‘আমি এক কার্টন পেয়েছি। আমাদের বাধা কাস্টমারদের কাছ থেকে আগাম টাকা নেওয়া আছে। তাঁদের দিতে হবে।’
মেসার্স ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজে তেল বিক্রির দায়িত্বে থাকা নিজাম উদ্দিন বাঙলা কাগজ ও ডনের কাছে দাবি করেন, ‘পুষ্টি কোম্পানি আমাদের ২ শ কার্টন মাল দিয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে এই তেল মার্কেটের দোকানদারদের দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু খুচরা কাস্টারমাররা ভিড় করছে। এখন আমরা দোকানদারদের দেবো নাকি কাস্টমারদের দেবো। আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ৫ হাজার কার্টন, সেখানে পেয়েছি আমি ২ শ কার্টন। এখন আমি বাকি মাল কোথায় পাবো। তীর কোম্পানি মাল দেয় না, ফ্রেস কোম্পানি মাল দেয় না, রূপচাঁদা কোম্পানি মাল দেয় না। শুধু পুষ্টি কোম্পানি মাল দিয়েছে। আজকে কোম্পানির রেটে অর্থাৎ ৭৪০ টাকায় মাল বিক্রি করছি।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৫ মে) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা জানায়, খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা ও পাম সুপার ১৭২ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ মে) থেকে এই দাম কার্যকর।