চাঁদ উদ্যানের মাদক সম্রাট ল্যাঙ্গড়া রানা : হিরোইন ও ইয়াবা মামলায় জামিনে : ফের বেপরোয়া
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকার ল্যাঙ্গড়া রানা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। হিরোইন ও ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়ে এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটেন। আর সেই মাসুদ রানা (ল্যাঙ্গড়া রানা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া) চাঁদ উদ্যান এলাকায় হিরোইন, ইয়াবা এবং গাঁজা বিক্রি করছেন দিনরাত। তাঁর বাসা চাঁদ উদ্যানের ৬ নম্বর সড়কের শেষ প্রান্তে। তবে আড্ডা দেন বেকারির গলি নামে পরিচিত এর আগের গলির শেষ প্রান্তে। আর বেকারির গলিতেই ল্যাঙ্গড়া রানা মাদক বিক্রি করে থাকেন। বাঙলার কাগজের হাতে এও তথ্য এসেছে যে, হিরোইন বিক্রি করতে গিয়ে ল্যাঙ্গড়া রানা জঙ্গিবাদে জড়িত এমন লোকজনের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন। এমনকি সম্প্রতি তিনি এক সাংবাদিকের কাছ থেকে কমমূল্যে একটি বাইক (নম্বর : ঢাকা মেট্রো হ : ৬৫-৮৭৮৭) নিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকতে পারেন, এমন ব্যক্তির কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেছেন। যার মালিকানা পরিবর্তনের জন্য মিরপুর বিআরটিএ তে কাজ হয়েছে বৃহস্পতিবার (১১ মে)। হিরোইন এবং ইয়াবা বিক্রি করার পাশাপাশি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকা ল্যাঙ্গড়া রানাকে স্বল্প সময়ের মধ্যেই আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন এলাকাবাসী।
চাঁদ উদ্যান এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধ ও দমন এবং ল্যাঙ্গা রানার ব্যাপারে মোহাম্মদপুর জোনের এসি শুক্রবার (১২ মে) সকালে বাঙলার কাগজকে বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে আমাদের সব সময় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য থাকে। আমরা আমাদের এলাকাকে মাদকমুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি। মাদক ব্যবসা করে কেউ পার পাবে না। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে আরও জোর দেবো।’
ল্যাঙ্গা রানার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসি বলেন, আমরা সব মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
‘তার নামে ওয়ারেন্ট থাকলে কিংবা সে মাদক বিক্রিতে জড়িত থাকলে কিংবা জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, আমরা এর সব বিষয়েই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
সূত্র জানায়, ল্যাঙ্গড়া রানা হিরোইন এবং ইয়াবার চালানসহ ধরা পড়ার পর দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে কিছুদিন ভালো থেকে আবারও হিরোইন এবং ইয়াবার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তাঁকে আবারও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি আবারও জেল খাটেন। এবারও তিনি বেশ কয়েকমাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পান। বর্তমানে তিনি হিরোইন এবং ইয়াবার মামলায় জামিনে আছেন। তার কাছ থেকে যে পরিমাণ হিরোইন উদ্ধার করেছে পুলিশ, সে পরিমাণ হিরোইনের বিচারে একজনের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য ল্যাঙ্গড়া রানার মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, হিরোইন এবং ইয়াবা মামলায় তিনি দুই দফায় জেল খেটেছেন।
সূত্র আরও জানায়, ল্যাঙ্গড়া রানা সাংবাদিকের কাছ থেকে বাইক কমদামে কেনার পর বেশি দামে ওই জঙ্গিবাদে জড়িত থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে, সেই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করার পর দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রায় ৮০ হাজার টাকা পায় (সাংবাদিকের কাছ থেকে সে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাইকটি নিয়েছিলো)। আর সেই ৮০ হাজার টাকা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েন ল্যাঙ্গড়া রানা। এরপর তিনি সম্পূর্ণ টাকা লগ্নি করেন হিরোইন এবং ইয়াবা ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি অন্য কারও মাধ্যমে গাঁজাও বিক্রি করে থাকেন। তিনি প্রতিদিনই হিরোইন, ইয়াবা এবং গাঁজা বিক্রি করা এবং করানোর পাশাপাশি নিজেও বিপুল পরিমাণে সেবন করে থাকেন। প্রতিদিন বিকেল এবং সন্ধ্যে বেলায় বেকারির গলিতে তিনি দলবল নিয়ে গাঁজার আড্ডা বসান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিছুদিন আগে বাইক বিক্রি করার পর ল্যাঙ্গড়া রানা মাদক ব্যবসায় বেপরোয়া হয়ে পড়েন। এমনকি বেকারির গলির শেষদিকের দোকানগুলো থেকে তিনি সিগারেটসহ বিভিন্ন জিনিস টাকা না দিয়েই নিয়ে নেন। একইসঙ্গে তিনি মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে যখন-তখন যার-তার বাসায় ঢুকে পড়েন। এতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে চাঁদ উদ্যান এলাকায় ৬ নম্বর রোড এবং বেকারির গলিতে সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী ল্যাঙ্গড়া রানা। তবে তিনি নিজের কাছে স্বল্প পরিমাণ হিরোইন এবং ইয়াবা রেখে বাকিগুলো অন্যান্যদের মাধ্যমেই বিক্রি করান বলে জানা গেলো। এক্ষেত্রে তিনি চতুরতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন বলেই জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ অবস্থায় চাঁদ উদ্যানের যুব সমাজকে রক্ষায় এবং জঙ্গিবাদের মতো গুরুতর অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগেই ল্যাঙ্গড়া রানাকে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন তাঁরা।