গভর্নর : ডলারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না।

গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দাম বেড়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা।

গভর্নর : ডলারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, কিছু মানুষ কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কেনায় মার্কিন ডলারের দাম ১ শ টাকা ছাড়িয়েছে। সুতরাং ডলার দাম বাড়ায় আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। 

গভর্নর অভিযোগ করে বলেন, গণমাধ্যম বাজারে আতঙ্ক বাড়াতে সাহায্য করেছে।

বুধবার (১৮ মে) নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে এক দিনব্যাপী এনবিএফআই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গভর্নর।

ফজলে কবির বলেন, ‘আমরা একটি আমদানি নির্ভর দেশ। ফলে পণ্যের আমদানি মূল্য পরিশোধে রিজার্ভে চাপ বাড়ায়, মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আমদানি ব্যয় ৬১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে রপ্তানি আয় ছিলো ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি ২৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তঃব্যাংক মার্কিন ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছি, কিন্তু বাজারে এরচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং প্রয়োজনীয় খাবারের আমদানি ব্যয় পরিশোধের জন্য সহায়তা করছে উল্লেখ করে ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাজারে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার ছেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পর গত ১১ মে রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো ৪৬ বিলিয়ন ডলার। বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ ৪২ দশমিক ৩৫ দাঁড়িয়েছে বলেই জানান গভর্নর ফজলে কবির।

ফজলে কবির বলেন, ‘জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ৩ দশমিক ২ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে, তবে একটি বা দুটি ছাড়া বাকি সব দেশ তাদের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন আমাদের থেকে বেশি করেছে।’

বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বর্তমান অস্থিরতা তীব্রতর করে মঙ্গলবার (১৭ মে) কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময় হার প্রথমবারের মতো ১ শ টাকা ছাড়িয়েছে। এদিন রাজধানীর ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল ছাড়াও পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময়) হাউজগুলোতে খুচরা ডলার ১ শ টাকা থেকে ১০২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এর একদিন আগেও ছিলো ৯৮ টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ গত সোমবার ডলারের দর বেঁধে দিয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু তাদের বেঁধে দেওয়া এ রেট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ‘মানছে না’। এখন ব্যাংকে এলসি করতে গেলে ডলারের বিপরীতে নেওয়া হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৩ টাকা। আবার কোনও কোনও ব্যাংক ৯৫ বা ৯৬ টাকাও নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিলো। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে।

২০২১ সালের ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায় ডলারের দাম। 

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকা হয়। গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। 

২৭ এপ্রিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা, ১০ মে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা এবং গত সোমবার (২৬ মে) ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায় ডলারের মূল্য। 

যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

অর্থাৎ গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দাম বেড়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা।