নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের’ তালিকা নিয়ে হেফাজতে ইসলাম যে বিবৃতি দিয়েছে, তা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই বলেই মন্তব্য করেছে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। আজ বৃহস্পতিবার (১২ মে) গণকমিশনের সদস্য সচিব তুরিন আফরোজ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হেফাজত আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী স্বাক্ষরিত বিবৃতি আমাদের নজরে এসেছে। দীর্ঘ এক বছর মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার নেতা এবং হেফাজত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বক্তব্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান ও অভিযোগ সত্য কি না, সেটা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’
অভিযোগ প্রমাণ হোক বা না হোক, আগেই হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মে মাসের মতো যে ‘ভয়ঙ্কর’ ভাষায় হুমকি দিয়েছে, তা বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের অংশ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘হেফাজতে ইসলাম আমাদের হুমকি দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ধর্মীয় উন্মাদনার তদন্তে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ গঠিত হয়। সম্প্রতি তাঁরা ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।
গণকমিশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার (১১ মে) ওই শ্বেতপত্র এবং ১ শ সন্দেহভাজন ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ব্যক্তির তালিকা দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছেন তাঁরা। এদিন দুদক থেকে বেরিয়ে তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এক হাজার মাদরাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে এই ১ শ ধর্ম ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তাঁরা মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ করেছেন। তাঁদের অর্থনৈতিক জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
এর প্রতিবাদ জানিয়ে আজ এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, জঙ্গি অর্থায়ন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগ এনে ১১৬ দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামি আলোচকের তালিকা করে তা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়ে ‘তথাকথিত গণকমিশন’ চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, “‘আমরা আজ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণকমিশনের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠনটি বরাবরের মতোই নিজেদের ইসলামবিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মোচন করেছে। তাদের এই শ্বেতপত্র যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, এটি সমগ্র দেশবাসীর সামনে দিবালোকের মতো পরিষ্কার।’”
হেফাজত আমিরের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গণকমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের নামে হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে দেশবাসী অবগত আছেন। সেদিন তারা মহাখালীতে নির্মূল কমিটির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সংগঠনের বহু নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুরুতর আহত করেছে। সেই অপরাধের মামলা এখনো বিচারাধীন।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করার ঘোষণাসহ গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন বানচালের জন্য সারাদেশে হেফাজতিদের তাণ্ডবে জড়িত হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যা আমাদের এবারের শ্বেতপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এসব সন্ত্রাসের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই,’ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আবারও সরকারের আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য জঙ্গি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে সে বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’