নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার মানিককান্দি গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য হাজী আবদুর রব মেম্বারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। অথচ ঈদের দিন ৩ মে ঘটা এ ঘটনায় পরদিন ৪ মে থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ সেটি এখনও আমলে নেয় নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে। আর মীমাংসা না হলে মামলা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুধীন চন্দ্র দাস শনিবার (৭ মে) সন্ধ্যায় বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘বিষয়টি এলাকার সংসদ সদস্য মীমাংসা করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই মামলা নেওয়া হয় নি। তবে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না হলে, মামলা নেওয়া হবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জানা গেছে, ঈদের দিন তিতাস উপজেলার ৬ নম্বর ভিটিকান্দি ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্যা এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাজী আবদুর রব মেম্বারের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় আবুল হোসেন মোল্যার পক্ষ থেকেও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাজী আবদুর রব মেম্বারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, এ ঘটনায় বাদি হয়েছেন হাজী আবদুর রব মেম্বারের পুত্র মিজানুর রহমান।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর প্রদত্ত ওই অভিযোগে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে বিবাদিরা হলো : ১. স্বপন মিয়া (৩৩), ২. মো. সুমন মিয়া (৩৮), ৩. মো. সোহরাব মিয়া (২৬), ৪. মো. শাহিন মিয়া (৪২) সর্বপিতা মো. সাইফুল ইসলাম, ৫. মো. মুর্শিদ মিয়া (৪৫), পিতা মৃত বজলু মিয়া; ৬. মো. মাসুম মিয়া (২০), পিতা মুর্শিদ মিয়া; ৭. মো. সাইফুল ইসলাম (৬৫), পিতা মৃত সিরাজুল ইসলাম; ৮. মো. আবুল হোসেন (৩৮), পিতা মো. সিদ্দিকুর রহমান; ৯. মো. আকাশ (২৪), পিতা মো. সালামত মিয়া; ১০. মো. শান্ত মিয়া (২৪), ১১. মো. মেরাজ মিয়া (২০) উভয় পিতা মো. আলাল মিয়া; ১২. মো. আমান উল্লাহ (৪০), পিতা মো. হবি মিয়া; ১৩. মো. আলাল মিয়া (৫০), ১৪. মো. হেলাল মিয়া (৫৫) উভয় পিতা মৃত খুরশিদ মিয়া; ১৫. মো. ইরন মিয়া (৬০) পিতা মৃত নায়েব আলী; ১৬. মো. আবু মুসা (৩৬), পিতা মো. জানারুল, সর্বসাং মানিককান্দি; ১৭. মো. কাজল মিয়া (৩২), পিতা মো. দিলু মিয়া; ১৮. মো. মোস্তফা (২৫), ১৯. মো. শিমুল মিয়া (২২) উভয় পিতা মো. মোখলেস মিয়া; ২০. মো. সোলায়মান (৩০), পিতা মো. মকবুল হোসেন, সর্বসাং দুলারামপুর, সর্বথানা তিতাস, জেলা : কুমিল্লাসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী থানায় হাজির হইয়া এই মর্মে অভিযোগ করতেছি যে, উল্লেখিত বিবাদিগণ পরস্পর আত্মীয় একদল ভুক্ত, দাঙ্গাবাজ ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। তাহারা এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। বিবাদিদের সঙ্গে গত ১১.১১.২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জের ধরে বিবাদিরা আমাদেরকে মারধর করার হুমকি প্রদান করে আসছে। গত ৩.৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ তারিখ রাত অনুমান ৮টার সময় উল্লেখিত বিবাদিরাসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাতে লাঠিসোটা লোহার রড, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও রাম দা নিয়ে এক বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে আমার বসতবাড়িতে অনধিকারে প্রবেশ করে বিবাদিরা আমার বসত বিল্ডিংয়ের দরজা-জানালা ভাঙচুর শুরু করে। তখন উল্লেখিত ১ নং স্বাক্ষী আমার পিতা হাজী আবদুর রব মেম্বার বিবাদিদেরকে আমার বসত বিল্ডিং ভাঙচুর করতে নিষেধ করলে ৭ নম্বর বিবাদির নিষেধে সকল বিবাদিরা ১ নং স্বাক্ষী আমার পিতা হাজী আবদুর রবকে আক্রমণ করিয়া তাহাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা ও লোহার রড দিয়া আমার পিতাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। আমার পিতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম করে। তখন উল্লেখিত ২ নম্বর স্বাক্ষী আমার মা মো. শিরিনা বেগম, আমার পিতাকে রক্ষা করতে গেলে বিবাদিরা আমার মাকেও আক্রমণ করে তাদের হাতে লাঠিসোটা ও লোহার রড দিয়ে আমার মাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে আমার মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম করে। ১. বিবাদি আমার মায়ের গলায় থাকা ১টি এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, যার মূল্য ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বিবাদিরা আমার বসত বিল্ডিংয়ের ভিতর অনধিকারে প্রবেশ করিয়া ২ ও ৩ নং বিবাদি আমার বসত বিল্ডিংয়ের ভিতর থাকা স্টিলের আলমারি তালা ভেঙ্গে আলমারির ভেতরে থাকা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার যার মূল্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ৪ নম্বর বিবাদি আমার বসত বিল্ডিংয়ের ওপর খাটের ওপর থাকা ১টি বিভো মোবাইল সেট যার মূল্য ১৫ হাজার টাকা ও একটি স্যামসাং মোবাইল সেট যার মূল্য ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ৫ থেকে ২০ নম্বর বিবাদিসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের মধ্যে কয়েকজন তাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা ও লোহার রড দিয়ে ১ ও ২ নম্বর স্বাক্ষী আমার পিতা-মাতাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম করে। আর বিবাদিদের সকলে আমার বসত বিল্ডিংয়ের দরজা-জানালা, বিল্ডিংয়ের ভিতর থাকা আলমারি, সুকেস, ড্রেসিং টেবিল, ওয়্যারড্রব, চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে অনুমান ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তখন আমার পিতা-মাতার ডাক-চিৎকারে অন্যান্য স্বাক্ষীরাসহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসলে বিবাদিরা আমার পিতা-মাতাকে খুন করার হুমকি দিয়া চলে যায়।
পরে আমার পিতা-মাতা স্থানীয় ডাক্তার দ্বারা প্রাথমিক চিকিৎসা করে। ঘটনার বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হলো।
স্বাক্ষী : ১. হাজী আবদুর রব মেম্বার (৭২), পিতা মৃত নায়েব আলী বেপারী; ২. মোসা. শিরিনা বেগম (৬০), স্বামী হাজী আবদুর রব মেম্বার; ৩. মো. মনির হোসেন (৫০), পিতা মৃত আবদুল করিম; ৪. মো. আহাদ মিয়া (২৪), পিতা মো. শাহআলম; ৫. মো. ইয়ার হোসেন (৩৮), পিতা মৃত আবদুল করিম; ৬. মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), পিতা মৃত আলী আকবর; ৭. মো. ফারুক মিয়া (৩৬), পিতা মৃত আলফু মিয়া; ৮. মো. মঞ্জুরুল ইসলাম (৪২), পিতা মো. সাহেব আলী সর্বসাং মানিককান্দি, থানা তিতাস, জেলা কুমিল্লা।