একটি সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নড়াইলের ঘটনা ঘটিয়েছে : নাছিম।

একটি সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নড়াইলের ঘটনা ঘটিয়েছে : নাছিম।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : একটি সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নড়াইলের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

বুধবার (২০ জুলাই) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহা পাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও মন্দির পরিদর্শনে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিন সকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের বার্তা নিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সড়কপথে দিঘলিয়ার সাহা পাড়ায় পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দির পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

এ সময় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নড়াইলে যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, এর কারণে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভাই বোনদের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা হয়েছে। একটি সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাঁদের ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য ও তাঁদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এই অঞ্চলের সাহসী ও সংগ্রামী মানুষদের আমরা অভিনন্দন জানাই এবং যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। হয়তো তাঁদের ক্ষয়ক্ষতি আমরা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে পারবো না, কিন্তু তাঁদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, সেটি কীভাবে দূর করা যায়, সেটাই হলো আমাদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ।

‘এ দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা হাজার বছর ধরে একসঙ্গে বাস করছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নড়াইলে হামলাকারীরা একটি অভিন্ন গোষ্ঠী। এরা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে চায়। এ দেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই একসঙ্গে হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। একটি গোষ্ঠী আমাদের এই সম্পর্কের বন্ধন নষ্ট করতে চায়। যাঁরা আমাদের এই সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইবে, সেই অপশক্তিকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে।

পরে দিঘলিয়া সাহা পাড়া রাধা গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজি, নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি, নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন খান নিলু ও স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা শিবনাথ সাহা, শিক্ষক তরুন সাহা ও দিলীপ সাহা।

মতবিনিময় সভায় নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বলেন, শান্তিপ্রিয় নড়াইলে যারা এ ঘৃণিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হবে। আপনাদের সাহস বাড়াতে হবে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। আমরা আপনাদের পাশে সবসময় ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমানয়ারা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নির্মল চ্যাটার্জি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়েম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজালাল মুকুল, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান প্রমুখ।

সভা শেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে নগদ টাকা বিতরণ করা হয়।

এ সময় লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন জানান, বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সাম্প্রদায়িক হামলার মামলায় বুধবার (২০ জুলাই) পর্যন্ত মোট ৭ জনকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) দিঘলিয়া সাহা পাড়ার আকাশ সাহার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি, দোকান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষুদ্ধ লোকজনকে লাঠিপেটা করে এবং টিয়ারশেল ও শর্ট গানের ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়।