অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ছন্দপতন ঘটাতে পারে রিজার্ভ জ্বালানি রোহিঙ্গা!

অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ছন্দপতন ঘটাতে পারে রিজার্ভ জ্বালানি রোহিঙ্গা!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতায় চাপে পড়েছে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত। সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। শিল্প খাতের কাঁচামাল ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় এখন অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি। উৎপাদন ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি—দুইয়ের গ্রাফই এখন ঊর্ধ্বমুখী। চাপ পড়ছে রিজার্ভেও। এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে গত এক বছরে বাংলাদেশেরই রিজার্ভ কমেছে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে। জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও রিজার্ভের দ্রুত অবনমন এখন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে এ মুহূর্তে বহিরাগত উদ্বাস্তুদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আবার এ উদ্বাস্তুদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতাদের সহযোগিতাও এখন দিন দিন কমছে। একই সঙ্গে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপে পড়ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজার ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলোর আর্থসামাজিক পরিবেশে এখন এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ভয়াবহ অবনতি হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও। বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তত্পরতা চালিয়েও সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পুনরায় ক্ষমতা দখল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যাবতীয় পথ আপাতত রুদ্ধ করে দিয়েছে।

জ্বালানি সমস্যা, রিজার্ভ দ্রুত কমে আসা ও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সঙ্কটকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, বিদ্যমান পরিস্থিতিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা না গেলে সামনের দিনগুলোয় তা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক বিপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসেই দেশে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। যেখানে আগস্টের শেষেও এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এর আগে জুলাইয়ের শেষে তা দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৯৫৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) আগস্টের শেষে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলার।

এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে বাংলাদেশেই সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে বলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংসের এক সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আবার এর সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও বড় হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে তা ১৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে প্রক্ষেপণ রয়েছে। গত অর্থবছরের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশিতে। বাণিজ্য ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও।

রিজার্ভের ঘাটতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বড় আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে গত বৃহস্পতিবার শেষে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছিল ১০৭ টাকা ৪০ পয়সা। গত মার্চেও এর পরিমাণ ছিল ৮৬ টাকা। সে হিসেবে গত ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক পণ্য ও জ্বালানি বাজারে দর বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি এখন মারাত্মক আকার নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার কারণে স্থিতিশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জনগণকে চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটের সময়েও চড়া মূল্য দিতে হয়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো গত কয়েক বছর বেশ ঔদাসীন্যের পরিচয় দিয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে ডলারের বিনিময় হার সমন্বয় করার দরকার ছিল। কিন্তু সেটি না করে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা হয়েছে। এ কারণে গত ছয় মাসেই টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

গত এক বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু গত অর্থবছরেই (২০২১-২২) রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৭৪০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরেও এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ২৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তত ১১ বিলিয়ন ডলার কমেছে। এ অবস্থায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির নীতি থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিনিময় হার বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর দূরদৃষ্টির অভাবই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তা চাপের মুখে আছে। রিজার্ভও দিন দিন কমে আসছে। আবার পুঁজি পাচারের বিষয়টিকেও যথাযথভাবে অ্যাড্রেস করা হয়নি। বাণিজ্যের ঘাটতি বা পুঁজি পাচারের কারণে আগে চলতি হিসাবের যে ঘাটতি দেখা যেত, তা অনেকটাই রেমিট্যান্স দিয়ে পুষিয়ে নেয়া যেত। এখন রেমিট্যান্স আহরণও কমছে। আবার পুঁজি পাচারও চলমান রয়েছে। বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মতো ব্যাপারগুলো ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে গরমিল দেখা যায়। আবার এ গরমিলের কারণ নিয়েও অনুসন্ধান হচ্ছে না। দেশে জ্বালানি নিরাপত্তাকে বড় চাপে ফেলেছে ভুল নীতির অনুসরণ। আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজ বা চালের দাম বাড়লে খাদ্যনিরাপত্তাও চাপে পড়ে যায়। যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বাড়ছে। খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও তা ক্রয়ের জন্য নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে ভোক্তাশ্রেণী চাপে পড়ছে। আবার মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এতে ডলারের বিনিময় হারও বাড়ছে। সব মিলিয়ে আমরা এখন এক ধরনের প্রলম্বিত বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ওপর দায় চাপালে হবে না। এখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ব্যাপার আছে। তেমনি দেশেরও রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ব্যাপার রয়েছে। আবার এগুলো মোকাবেলায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতির বাস্তবায়নও দেখা যাচ্ছে না।

এখন পর্যন্ত চলতি বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই বড় ধরনের জ্বালানি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে পার করেছে বাংলাদেশ। ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ এখন বন্ধ। স্থানীয় পর্যায়ে উত্তোলনও পর্যাপ্ত মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে স্থানীয় উত্তোলন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সংগৃহীত এলএনজি যুক্ত করার পরও জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১৪০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসের এ সঙ্কট এখন শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতকে বড় সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিদ্যমান লাইনের গ্যাস বিল পরিশোধ করেও এর প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাচ্ছেন না শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। ক্যাপটিভ পাওয়ারগুলো প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ পাচ্ছে না। নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে কারখানা চালু রাখতে বৃহদায়তনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এলপিজি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এলপিজির প্রধান দুই কাঁচামাল বিউটেন ও প্রোপেনের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য দুটির মূল্য এখন কমতির দিকে থাকলেও শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে না ডলারের বিনিময় হারে ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে।

কিছুদিন আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের বেশি। বর্তমানে বিভিন্ন বাজার আদর্শে তা অবস্থান করছে ৮০-৮৫ ডলারের মধ্যে। এখন দাম কিছুটা কমলেও মজুদ সক্ষমতা না থাকায় এর সুবিধা নিতে পারছে না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিপিসি। যদিও গত নভেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত দুই দফায় ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হলেও এর আগের দফায় তা বেড়েছিল ৩৪ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির চাপ সামাল দিতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পেট্রল-অকটেনের দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করছে বিপিসি। দীর্ঘদিন দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুতের সক্ষমতার পুরোটাই চালু রাখতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে চার-পাঁচ গুণ। এ অবস্থায় এখন বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতাকে বর্তমান সঙ্কটের মূল হিসেবে দেখছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরূল ইমাম। বাঙলার কাগজ ও ডনকে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশে গ্যাসের স্থানীয় সরবরাহ বাড়ানোর ওপর নজর না দিয়ে জোর দেওয়া হয়েছে আমদানীকৃত এলএনজির ওপর। এ সময় স্থানীয় পর্যায়ে উত্তোলন বাড়াতে পুরনো কূপগুলো সংস্কারের পাশাপাশি যদি পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকেও আবারো উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে এ সঙ্কট অনেকটাই প্রশমন করা যেত।

জ্বালানি ও রিজার্ভ চাপে পড়ায় বিপন্ন দেশের অর্থনীতিকে আরও বিপদগ্রস্ত করে তুলছে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গার উপস্থিতি। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য প্রয়োজনীয় ও দাতা দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ আদায় করতে পারেনি জাতিসংঘসহ সহযোগী সংস্থাগুলো। শুরুতে উদ্বাস্তুদের আগমনকে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো যে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিল এখন আর তা দেখা হচ্ছে না। বরং ক্রমেই রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া অনুদানের পরিমাণ কমছে।

অন্যদিকে কক্সবাজারের স্থানীয় পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থসামাজিক অবস্থারও বড় ধরনের অবনমন ঘটিয়েছে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি। স্থানীয়দের জীবন-জীবিকায় প্রভাব ফেলার পাশাপাশি নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এ মুহূর্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক কূটনৈতিক তত্পরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অসহযোগিতা ও অনিচ্ছার কারণে তা এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, জ্বালানি-রিজার্ভ-রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। এর মধ্যে এক্সটারনাল বা বহিস্থ সমস্যাগুলোর ওপরে আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এ তিন সমস্যার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আরও কিছু সমস্যা আছে, যেগুলোও কম না। যেমন আর্থিক খাতের সমস্যা। নানা রকম অনিয়ম, আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে এ খাতে। আর্থিক খাতটি অর্থনীতির প্রতিটি কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। বিগত দিনগুলোয় যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, সেগুলোর শুরু হয়েছিল মূলত আর্থিক খাত থেকেই, যা পরে সব ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছিল। সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জও বেশ বড়। দুর্নীতি, মুদ্রা পাচারের মতো কর্মকাণ্ডে আর্থিক শৃঙ্খলা মারাত্মক লঙ্ঘন হয়েছে। তাই এ সমস্যাও কম বড় না আমাদের জন্য। এসব কিছুর প্রভাবে সৎ ব্যবসায়ীরাও ঠিকভাবে সব কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন না। জ্বালানি ব্যবহারে যদি আমরা আগে থেকে সাশ্রয়ী হতাম, তাহলে হয়তো এখন চাপ মোকাবেলা সহজ হতো। রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও আমাদের অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সামগ্রিকভাবে সমস্যাগুলো যদি আরও ঘনীভূত হয়, তখন আগামী দিনগুলোতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। যে অর্জনগুলো আমরা করেছি, সেগুলো অনেক মন্থর হয়ে যাবে। সামনে এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, এগিয়ে যাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সামনের দিনগুলোর জন্য এগুলো বড় ধরনের হুমকি।

তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ জাতীয় অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো এখনো বড় ধরনের হুমকি হয়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন সাবেক ও বর্তমান নীতিনির্ধারকরা। বিষয়গুলো নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণও নেই বলে অভিমত তাদের।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে। পৃথিবীর সব দেশই কম-বেশি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করছে, আমরাও করছি। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই।