১০ মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে বাজেটের অর্ধেক টাকা।

১০ মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে বাজেটের অর্ধেক টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যয়ের যে সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে, এক্ষেত্রে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন খাতগুলোতে যাচ্ছে তার প্রায় অর্ধেক টাকা।

দেশে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে ৫৮টি। তার মধ্যে ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বছরওয়ারি সার্বিক ব্যয় বরাদ্দের হিসাবে অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে।

এগুলো হলো : স্থানীয় সরকার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়।

বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বিরাট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক টাকাই যাচ্ছে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয়। যার পরিমাণ ৩ লাখ ৯ হাজার ৫১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এটি বাজেটের মোট ব্যয়ের ৪৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যয়ভার নির্বাহে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ১০ মন্ত্রণালয়ের পেছনে বরাদ্দ বাড়ছে ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ।

একটি নির্দিষ্ট বছরজুড়ে সরকারের আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক পরিকল্পনা হলো জাতীয় বাজেট। প্রতিবছর সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহে অর্থবছরের শুরুতে একটি ব্যয়ের আকার নির্ধারণ করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সরকারি ব্যয়ের সম্ভাব্য আকার ধরা হচ্ছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট পেশ করা হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর জন্য বিভিন্ন খাতের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সেসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আনুতোষিক ব্যয় বরাদ্দের হিসাব চূড়ান্ত হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের আর্থিক ব্যয় বিবরণীর সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত অর্থবছরেও তাঁরা বাজেট থেকে সর্বোচ্চ অর্থ নিয়েছে, যা ছিলো ৩৯ হাজার ২১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকারকে দেওয়া হচ্ছে ৪১ হাজার ৭০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আওতাধীন সবকটি বিভাগের জন্য আসন্ন বাজেটে মোট ৪০ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জন্য এ খাতে রাখা হয়েছিলো ৩৭ হাজার ৬৯০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ অর্থ যাবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে। আগামী অর্থবছর এ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩৯ হাজার ৮৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এ বিভাগে রাখা হয়েছিলো ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে রাখা হয়েছে ব্যয় বরাদ্দের চতুর্থ অবস্থানে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের সার্বিক ব্যয়ভার নির্বাহে এই বিভাগ পাচ্ছে ৩৫ হাজার ৮২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিলো ৩২ হাজার ৯৪১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩১ হাজার ৭৫৪ কোটি ২ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয় ২৬ হাজার ৩১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে তাঁরা।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হচ্ছে ২৯ হাজার ২৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এজন্য রাখা হচ্ছে ২৫ হাজার ৯১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

আগামী অর্থবছরের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগ পাচ্ছে ২৪ হাজার ৫০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর তাঁরা পেয়েছিলো ২৩ হাজার ৮২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এবার আগের বছরের তুলনায় বিদ্যুৎ বিভাগকে কম অর্থ দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এর জন্য ২৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বছর এ বিভাগের জন্য রাখা হয়েছিলো ২৫ হাজার ৩৯৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় এবার বরাদ্দ পাচ্ছে ২৩ হাজার ২২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। চলতি বছর তার পরিমাণ ছিলো ১৬ হাজার ২০১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া দশটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে বরাদ্দের বিচারে এবার আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বাড়ছে কৃষি মন্ত্রণালয়েরই।

সবশেষ রেলপথ মন্ত্রণালয়কে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য দেওয়া হবে ১৮ হাজার ৮৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য রাখা হয়েছিলো ১৭ হাজার ৫৪৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ ট্রিলিয়ন টাকা (৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা); যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।