হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিলেন জয়

হত্যাচেষ্টা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিলেন জয়

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ ও ডন : অপহরণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের মামলায় ৫ জনের বিরুদ্ধে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা এবং তাঁরই ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

আজ রোববার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন জয়। আর জবানবন্দি দিয়ে পৌনে এক ঘণ্টার মাথায় তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৫ সালে পল্টন থানায় দায়ের করা এক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ নিয়ে মোট দশজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু জানিয়েছেন।

মামলার পাঁচ আসামি হলেন : আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মামুন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবার নিয়ে কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। তাঁর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন নিউইয়র্কের আদালত।

সিজার আদালতের রায়ে কারাগারে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়।

এরপর জয় ফেসবুকের এক পোস্টে লেখেন, ‘আমাকে যখন কেউ হত্যার চেষ্টা করছে, সেটিও তখন আমি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে নিচ্ছি। যারা এর জন্য দায়ী, তারা বিএনপির যতো উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেনো, আমি তাদের হদিস বের করে বিচারের মুখোমুখি করবো।’

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ক্ষতি করার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য পেতে সিজার এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দিয়েছিলেন।

ঘুষ দিয়ে তথ্য পাওয়ার পর  সিজার তা বাংলাদেশি এক সাংবাদিককে সরবরাহ করেছিলেন এবং বিনিময়ে প্রায় ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৭ ও ১২০(বি) ধারায় ঢাকার পল্টন থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

সেখানে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

২০১৬ সালের এপ্রিলে শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে সময় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিএনপি ঘনিষ্ঠ এই সম্পাদককে। ইস্কাটনে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জয় সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও গোপনীয় নথিপত্র সেখানে পাওয়া গেছে। 

অন্যদিকে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান সে সময় দাবি করেছিলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক’ হিসেবে নিবন্ধ লেখার জন্যই তার স্বামী ওই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

পাঁচ মাস কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান।

এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে কারাবান্দি অবস্থায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে তাকে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, ‘মাহমুদুর রহমান একজন মানুষের (জয়) গতিবিধি, তার কর্মক্ষেত্র, পরিবারের সদস্যরা কখন কোথায় কী করছে এই সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য পেয়েছিলেন মিল্টনের (সিজারের বন্ধু মিজানুর রহমান ভূঁইয়া) কাছ থেকে। এটি একজন মানুষকে অপহরণ করার জন্য যথেষ্ট।’

সিজার তার বন্ধু মিল্টন ভূঁইয়ার মাধ্যমে ওই সব তথ্য ঢাকায় মাহমুদুরকে পাঠিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সে সময় জানিয়েছিলেন।

সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনিও দেশের বাইরে চলে যান। এদিকে তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আর আদালত অভিযোগ গঠনের শুনানি করে আসামিদের বিচার শুরুর সিদ্ধান্ত দেন।