হাজতে যুবকের মৃত্যু : পুলিশের বিরুদ্ধে মরদেহ না দেওয়ার অভিযোগ স্ত্রীর।

হাজতে যুবকের মৃত্যু : পুলিশের বিরুদ্ধে মরদেহ না দেওয়ার অভিযোগ স্ত্রীর।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : রাজধানীর হাতিরঝিল থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হওয়া যুবক সুমন শেখের (২৬) মরদেহ পুলিশ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনেরা রোববার (২১ আগস্ট) সকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহটি নিতে গেলে পুলিশ মরদেহ দিতে রাজি হয় নি।

সুমন শেখের স্ত্রী জান্নাত অভিযোগ করেন, মরদেহ আনতে গিয়েছিলেন মর্গে। কিন্তু পুলিশ মরদেহ দেয় নি। তারা বলছে, মরদেহ যদি ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্তনগর গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়, তাহলে দেওয়া হবে। কিন্তু পশ্চিম রামপুরার বাসায় নেওয়া হলে দেওয়া হবে না।

রামপুরার বাসায় মরদেহটি নেওয়া হলে স্থানীয় ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই আশঙ্কা থেকেই পুলিশ মরদেহ দিতে চাইছে না বলেই অভিযোগ স্বজনদের। এবার মরদেহ না পেয়ে আদালতে মামলা করতে গেছেন সুমনের স্বজনেরা।

জানা গেছে, সুমনকে চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করে থানার হাজতখানায় রেখেছিলো পুলিশ। শনিবার সেখান থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসী হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।

পুলিশ বলছে, সুমন হাজতখানার লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় পরনের প্যান্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আত্মহননের দৃশ্য স্পষ্ট। স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে তিনি গলায় ফাঁস দেওয়ার সুযোগ পেতেন না কোনোভাবেই।

এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল শেখ জাকারিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানায় যেসব পুলিশ সদস্য ডিউটি করেন, তাঁদের হাজতখানায় আসামি দেখভাল করার কথা। আসামি ভেতরে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাচ্ছে কি-না, সেটিও দেখার দায়িত্ব তাঁদের।

সুমনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুমনের নাম আসলে সুমন না, রুমন। তাঁর বড় ভাইয়ের নাম সুমন শেখ। রুমনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না হওয়ায় ভাইয়ের এনআইডি দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। ওই থেকে রুমন হয়ে যান সুমন। অফিস এমনকি এখন থানায়ও সুমন শেখই লেখা হচ্ছে।

সুমনের স্বজনেরা জানান, তাঁর বাসা পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী জান্নাত ও সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। গত বছর তাঁর মা মারা গেছেন। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়াপদা রোডের বাসায় মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন সুমন। বিকেল ৪টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ চুরি মামলায় তাঁকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। থানা হাজতখানায় রেখে দেওয়া হয় তাঁকে।