সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে শ্রেণিকক্ষে ফিরলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। শিক্ষার্থীরা খুশি।

সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে শ্রেণিকক্ষে ফিরলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। শিক্ষার্থীরা খুশি।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; মুন্সীগঞ্জ : ধর্ম অবমাননার মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়া বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল দীর্ঘ ২৯ দিন পর শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন। আজ মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে তিনি দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করেন। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ক্লাসে ফেরায় খুশি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আকাশ বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, হৃদয় মণ্ডল খুব ভালো একজন শিক্ষক। তাঁর পাঠদান অন্য সবার চেয়ে আলাদা। ভুল–বোঝাবুঝির কারণে মাঝখানে কিছু খারাপ সময় পার হয়েছে। ‘স্যার আবার ক্লাসে ফিরে আসায় আমরা খুব খুশি।’ হৃদয় মণ্ডলের সহকর্মী বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক শিক্ষক সজল সূত্রধর বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, হৃদয় স্যারের পাঠদান চমৎকার। তিনি বিজ্ঞান ও গণিত বিষয় খুব ভালো বোঝান। তিনি না থাকায় বিদ্যালয়ে একটা শূন্যতা ছিলো। আজ যোগ দেওয়ার পর আবার সবকিছু পূর্ণ হলো। আজ সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে আলোচনা সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সমর ঘোষ, জেলা মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি হামিদা খাতুন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার, কেন্দ্রীয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য রঞ্জন সাহা, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন, বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলমগীর খান প্রমুখ। শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ক্লাসে ফেরা নিয়ে শঙ্কা ছিলো। সব শঙ্কা কেটে গেছে। অনেক দিন পর নিজের শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে আছে। শিক্ষার্থীরাও তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছে। তিনি আশা করছেন, আর কোনও সমস্যা হবে না। আগের মতোই নিজের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন। শ্রেণিকক্ষে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদি হয়ে মামলা করেন। ওইদিনই হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৩ ও ২৮ মার্চ আদালতে তাঁর জামিন চাওয়া হয়েছিলো। সে সময় আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর ১০ এপ্রিল জামিনে কারামুক্ত হন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করা হবে। এর মধ্যে যে কয়দিন হৃদয় মণ্ডলকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে, সে কয়দিন বিদ্যালয় থেকে তাঁর ছুটির ব্যবস্থা করা হবে। প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ মার্চ শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে তাঁকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তাঁকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত কারাবাস করতে হয়। কারাবাস থেকে আসার পর আবারও পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। চার কার্যদিবসের মধ্যে তিনি নোটিশের জবাব দেন। আজ মঙ্গলবার তিনি তাঁর ক্লাসে ফিরেছেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। শিক্ষার্থীরাও তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছে।