সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁর ছেলে : চেয়ারম্যানের নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশ করায় বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; জামালপুর : ‘ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশ করার জেরে বাবাকে ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।’ শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় জামালপুরের বকশীগঞ্জে এন এম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিহত সাংবাদিক নাদিমের জানাজা শেষে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত (১৯) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটাই জানিয়েছেন।
জানাজা শেষে নাদিমের লাশ নিলক্ষিয়া গোমেরচরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেলা সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
এদিকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ। আটকরা হলো : গোলাম কিবরিয়া সুমন, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, আইনাল হক, কফিল উদ্দিন, শহিদ ও ফজলুল হক।
আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বাঙলার কাগজকে জানান, আমার বাবা সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করেছিলো। এতে ইউপি চেয়ারম্যান বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এরপরেও পরে বাবা সংবাদ করতে থাকায় চেয়ারম্যান বাবা ও তাঁর এক সহযোগীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। ওই মামলা ১৪ জুন আদালত খারিজ করে দেন। এতে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু আরও ক্ষিপ্ত হন। সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে চেয়ারম্যান তার দুই ছেলেসহ সন্ত্রাসীরা ওৎ পেতে থাকে। রাত ৯টার দিকে বাবা এবং তার দুই সহকর্মী মোটরসাইকেলে করে ফিরছিলেন। তখন চেয়ারম্যানের ছেলে গোলাম কিবরিয়া সুমন আমার বাবার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বাঙলার কাগজকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। বাবু চেয়ারম্যানকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এদিকে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার প্রতিবাদে জেলার সকল সাংবাদিক প্রতিবাদ সভা করেছেন। সভায় বক্তারা অবিলম্বে ঘটনার মূলহোতা চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, তার দুই ছেলেসহ দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মানবকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি কাফি পারভেজের, জামালপুর পল্লী কণ্ঠের সম্পাদক নুরুল হক, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিন্টু, মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক, শাহিন আল আমিন ও সাংবাদিক লায়নসহ আরও অনেকে।
বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার পাথাটির এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন সাংবাদিক নাদিম। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে তাঁর করুণ মৃত্যু হয়।