শহিদ মিনারে পরিবেশ সমাবেশ

শহিদ মিনারে পরিবেশ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : পরিবেশ রক্ষার দাবিতে কেন্দ্রীয় (জাতীয়) শহিদ মিনারে হয়েছে পরিবেশ সমাবেশ। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশটি চলে ৫টা পর্যন্ত। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) যৌথ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশকর্মীরা এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বাপা’র সহ-সভাপতি ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আমাদের সমাজ। সমাজ যখন সচেতন থাকে, তখন অন্যান্য অসঙ্গতিতে প্রতিবাদ করা যায়, সংশোধন করা যায়। মানুষ মানুষের যখন কাছাকাছি আসে, সামাজিক সম্পদ বা পুঁজি তৈরি হয়। এ সংগঠিত মানুষ যখন প্রাণের কথা বলে, পরিবেশের কথা বলে, তখন সমাজের ভেতরে এক ধরনের সক্রিয়তা তৈরি হয় এবং সেই সক্রিয়তা শেষ পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব, আমাদের বেঁচে থাকার উপায়গুলোর কথা বলে। আমাদের জ্ঞান এবং উদ্ভাবন যদি পরিবেশবান্ধব হয়, যদি সমাজবান্ধব হয়, তাহলে উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি আমরা সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারি‌।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সক্রিয় কর্মীরা এখানে এসেছেন। আপনারা এ কর্মে সক্রিয় থাকেন। আমাদের এ আন্দোলন একদিনেই শেষ হবে না। এটি ধীরে ধীরে আরও দানা বাঁধবে। প্রতিবাদী হলে কিছু কিছু কথা নীতিনির্ধারকদের কানে যায়। এ কারণেই আমরা কোনও কোনও জায়গায় ইতিবাচক সাফল্য পেয়েছি।’

বাপা’র নির্বাহী সদস্য এবং বেন’র বৈশ্বিক সমন্বয়ক অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘চারদিকে আজ আমাদের রূপসী বাংলা নেই। আমাদের বাংলা আজ আর সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা নেই। আজ নজরুল বেঁচে থাকলে বলতেন না বাংলাদেশ শ্যামলা বরণ মায়ের রূপে রয়েছে। আমরা প্রকৃত রূপসী বাংলা চাই। আমরা সোনার বাংলা চাই, যে সোনার বাংলার স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন।

সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সংগ্রাম করছেন। সংগ্রাম করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলোকে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করছেন। আপনাদের সেই সংগ্রামের প্রতি আমি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। আমাদের এই বাংলাদেশকে আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ হিসেবে পেতে চাই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যারা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, তাদের অতীত যেন আমাদের ভবিষ্যৎ না হয়। বঙ্গবন্ধু যে সংগ্রাম করে গেছেন, সেই সংগ্রামের একটি অংশ হিসেবে আমি এটিকে দেখি। এই মহাসমাবেশ আন্দোলনের একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। কারণ আমরা আমাদের এই সংগ্রামকে একটি অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। এবারের এ বছরটি আগামী বছরের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাইব, আমাদের যেসব রাজনৈতিক নেতারা আছেন, যারা আমাদের জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেন, তারা এ পরিবেশ এবং পরিবেশ আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করবেন, এটি আমাদের প্রত্যাশা।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বাপা’র সহসভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, বাপা’র সহসভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশ পরিবেশবিদ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিরা।

আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বাপা-বেন সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের হাওর, নদী, ও বিল : সমস্যা ও প্রতিকার’।