শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার।

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ মো. এনামুল হককে (৫৩) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (১৮ জুন) রাতে তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

রোববার (১৯ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

তিনি জানান, জঙ্গি হামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি পরিচালনা করছিলো র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল ও রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজির প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিমকে গ্রেপ্তার করে।

২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কোটালীপাড়ার জনসভার অদূরে জঙ্গি শেখ মো. এনামুল হকসহ অন্য জঙ্গি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্ত শেষে মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তার শেখ মো. এনামুল হকসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার এনামুল জানায়, ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির আমির মুফতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় তার। সে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘সোনার বাংলা ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলো।

মুফতি হান্নানসহ জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে। বিভিন্ন সময়ে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক এবং সমাবেশে অংশগ্রহণ করতো সে। এনামুল মুফতি আব্দুল হান্নানের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের কারখানায় সাবান তৈরির কেমিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরকদ্রব্য, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আনে ও লোহার ড্রামের ভেতর ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজির দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে কোটালীপাড়ার জনসভার অদূরে বোমা পুতে রাখে। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ফাঁস হবার পর সেনাবাহিনী বোমা দুটো নিস্ক্রিয় করে।

আত্মগোপনে পেশা, স্থান ও এনআইডি পরিবর্তন : প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার বিষয় প্রকাশ্যে আসার পর এনামুল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যান। পরে সে নিজের পরিচয় গোপন করে ক্বারী না হওয়া সত্ত্বেও ক্বারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরেরও বেশি সময় ইমামতি সে। গাজীপুরে থাকতেই সে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে।

গাজীপুরে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে দুই বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সে। একইভাবে সে নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করতো। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে সে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে আত্মগোপনে ছিলো।

গ্রেপ্তার এনামুল ঢাকার উত্তরায় ২০১৫ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে ‘ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যান্সারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা শুরু করে। তার চিকিৎসায় ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় বলে সে দাবি করতো। এইডস রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা দিতে পারতো বলেও দাবি করতো সে। 

এ ছাড়া সে নিজেকে হেপাটাইটিস ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, মেদ, বন্ধ্যাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনি, যৌন ও মানসিক রোগসহ বহুবিধ রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবি করতো।

‘দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি কীভাবে পেশা ও এনআইডি পরিবর্তন করে অনেকটা ২২ বছর আত্মগোপনে থাকলো’ জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন জানান, ‘বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন। গাজীপুরে থাকতেই ২০১০ সালে তিনি নামের কিছু অংশ পরিবর্তন করে শেখ মো. এনামুল হক থেকে শেখ মো. এনামুল করিম নামে স্থায়ী ঠিকানা গোপালগঞ্জের স্থানে গাজীপুরের ঠিকানায় এনআইডি করেন। সর্বশেষ তিনি উত্তরা দিয়াবাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। তার গতিবিধি ও কার্যক্রম সংক্রান্ত সন্দেহের অবকাশ ছিলো। সে ধরনের গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে দেরির কারণ পেশা স্থান ও নাম পরিবর্তন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’