শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : এসএসসির সব বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে ‘বৈষম্যহীনভাবে’ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দাবিতে একদল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ–অবরোধের মুখে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

চেয়ারম্যান পদ থেকে সোমবার (২১ অক্টোবর) তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রবিবার (২১ অক্টোবর) রাতে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, বোর্ডে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছেও তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগে দুপুর থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত  ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে ঢুকে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, বিক্ষোভ চলাকালে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে ঢুকে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষেও ভাঙচুর চালিয়েছেন।

এ বছরের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিলো। বাকি ছিলো ব্যবহারিক পরীক্ষাও। একপর্যায়ে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থীরা। তখন স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ।

১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। অর্থাৎ এসএসসিতে যে শিক্ষার্থী যত নম্বর পেয়েছিলেন, সেটা এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এ দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।

আজ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বিক্ষোভে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইতিমধ্যে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এজন্য এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সব বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল নতুন করে প্রকাশ করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুরের দিকে ‘এইচএসসি ব্যাচ ২০২৪’-এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে যান। তাঁদের মধ্যে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কৃতকার্য শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একপর্যায়ে ফটকের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গণের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে ভবনের ভেতরেও ঢুকে পড়েন তাঁরা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বোর্ডের ভেতরে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা এই হামলার বিচার চান। একইসঙ্গে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগও দাবি করেন।  

অন্যদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে ও কক্ষের সামনেও ভাঙচুর চালান। বিকেল পৌনে চারটার দিকে চেয়ারম্যানের দপ্তরে  গিয়ে দেখা গেছে, চেয়ার পড়ে আছে। কাগজপত্রসহ ফাইল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে।

এদিকে শিক্ষাবোর্ডে এমন পরিস্থিতির কারণে সনদ, নম্বরপত্রসহ বিভিন্ন সেবা নিতে আসা মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। এ নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এমন পরিস্থিতিতে রাতে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

এর আগে আজ দুপুরের দিকে তপন কুমার সরকার বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে এই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এখন তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হোসেন বলেন, ফলাফলে বৈষম্য হয়েছে—এই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর প্রতিবাদে তাঁরা বোর্ডের সামনে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা একপর্যায়ে বোর্ডের ভেতরে ঢুকে পড়েন। নথিপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রক্ষায় বোর্ডের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। তখন ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন।