লাগামহীন নিত্যপণ্যের মাঝে এলপিজির দাম বাড়লো ২২ শতাংশ!

লাগামহীন নিত্যপণ্যের মাঝে এলপিজির দাম বাড়লো ২২ শতাংশ!
ডন প্রতিবেদন : লাগামহীন নিত্যপণ্যের মাঝে এবার বেসরকারি বিপণন কোম্পানিগুলোর আবেদনে দেশের বাজারে সিলিন্ডারে বিক্রি হওয়া তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির দাম টানা চতুর্থ মাসেও বাড়ানো হলো। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসি রবিবার (১০ অক্টোবর) ভ্যাটসহ প্রতিকেজি এলপিজির দাম ৮৬ টাকা ৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০৪ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ, প্রতিকেজিতে দাম বাড়লো ২২ শতাংশ। সে অনুযায়ী অক্টোবর মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ১২ কেজি ওজনের একটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম পড়বে মূসকসহ ১২৫৯ টাকা, যা সেপ্টেম্বরে ছিলো ১ হাজার ৩৩ টাকা। একই হারে সাড়ে ৫ কেজি, সাড়ে ১২ কেজি, ১৫ কেজি, ১৬ কেজি, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২২ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩ কেজি, ৩৫ কেজি ও ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে। বিইআরসির ঘোষণা অনুযায়ি, রবিবার (১০ অক্টোবর) থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারেরসঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সৌদি আরমকো কোম্পানির প্রোপেন ও বিউটেনের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিমাসে এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি। এরমধ্যে বেসরকারি বিপণন কোম্পানিগুলোর আবেদনে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার শুনানি করে পরিচালন ব্যয় বাড়িয়ে নতুন এই মূল্যহার নির্ধারণ করা হলো। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এই শুনানিতে কিছু নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়। এতোদিন আগের মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী নতুন মাসের এলপিজির খুচরা মূল্য নির্ধারিত হত। নতুন নিয়মে চলতি মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী এলপিজির খুচরা মূল্য নির্ধারিত হবে। বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, অক্টোবর মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেনের কন্ট্রাক্ট প্রাইস বা সিপি যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৮০০ ডলার ও ৭৯৫ ডলার। প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণের (৩৫:৬৫) গড় মূল্য প্রতি টন ৭৯৬ দশমিক ৭৫ ডলার। তিনি জানান, গত অগাস্ট মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে প্রতি টন প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রনের গড় মূল্য ১৪০ ডলার বেড়েছে। সেই হিসাবে ১২ কেজি সিলিন্ডারের মূল্য মূসকসহ ১৫৮ টাকা বাড়ছে। অর্থাৎ কেজিতে বাড়ছে ১৩ টাকা ১৬ পয়সা। আর বিভিন্ন পর্যায়ে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা ৬৯ পয়সা। বিইআরসির নিয়ম অনুযায়ী, সৌদি সিপির হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে এলপিজির খুচরা মূল্য মাসে মাসে ওঠানামা করলেও কোম্পানির পরিচালন ব্যয় অপরিবর্তিত থাকবে। >> রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে সরবরাহ করা এলপিজির দাম ভোক্তাপর্যায়ে মূসক ছাড়া প্রতিকেজি ৯৫ টাকা ১৭ পয়সা এবং মূসকসহ প্রতিকেজি ১০১ টাকা ৬৮ পয়সা ঠিক করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এ গ্যাসের দাম ছিল মূসকসহ প্রতিকেজি ৮৩ টাকা ৭৭ পয়সা। >> যানবাহানে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের মূসক ছাড়া দাম প্রতি লিটার ৫৫ টাকা ২৭ পয়সা এবং মূসকসহ ৫৮ টাকা ৬৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে যা সেপ্টেম্বরে মূসকসহ প্রতি লিটার ৫০ টাকা ৫৬ পয়সা ছিল। মূল্যহার পরিবর্তনের আবেদন জমা না পড়ায় সরকারি এলপিজির দাম অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিমাসের ১৪ তারিখের মধ্যে ওই মাসের এলপিজির নতুন মূল্য ঘোষণা করবে বিইআরসি। দাবি কতটা পূরণ হলো : দ্বিতীয় দফায় শুনানিতে বিগত মাসের সিপি মূল্যের পরিবর্তে বর্তমান সৌদি সিপি অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল বেসরকারি বিপণন কোম্পানিগুলো। সেই দাবি পূরণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ছাড়া লাভের মার্জিন বাড়ানোর দাবি ছিল কোম্পানিগুলোর। এলপিজির সিলিন্ডারের আয়ুষ্কাল ২০ বছরে পরিবর্তে ১০ বছর করতে বলা হয়েছিল। বিতরণ ব্যয় ২৪ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা এবং রিটেইল কস্ট ২৭ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা করার প্রস্তাব ছিল। সবমিলিয়ে বিইআরসির বর্তমান দামের সঙ্গে আরও ২২৪ টাকার বিভিন্ন দায় যোগ করার প্রস্তাব করেছিল অপারেটরগুলো। বিইআরসির চেয়ারম্যান জানান, নতুন আদেশে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারে বিক্রয়, বিপণন, পরিবহন, প্রশাসনিক ও সাধারণ ব্যয় ৬ টাকা ৩২ পয়সা; অবচয়খাতে ১৫ টাকা ৮৪ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদ ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে, ফলে এই খাতে বেড়েছে ১৩ টাকা। রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ইন্টারেস্ট অ্যান্ড রিস্ক প্রিমিয়াম) ৮ শতাংশ করা হয়েছে, যাতে ৮ টাকা ২৮ পয়সা বেড়েছে। করপোরেট কর ৪ টাকা ৮৪ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য ব্যয় বাবদ ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৮৪ পয়সা। এভাবে আরও কয়েকটি সূচকে পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বলে জানান বিইআরসির কর্মকর্তারা। যে কারণে দ্বিতীয় দফায় গণশুনানি : দেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ২৫ বছর ধরে এলপিজি বিক্রি হলেও দাম নির্ধারণে রাষ্ট্রীয় কোনও হস্তক্ষেপ ছিলো না। আদালতের নির্দেশে বিইআরসি গত ১৪ জানুয়ারি প্রথমবারের মত গণশুনানি করলেও তখন দাম নির্ধারণ করা হয় নি। পরে গত ১২ এপ্রিল আদালতের নির্দেশেই মাসে মাসে সৌদি আরামকোর সিপি মূল্যের ভিত্তিতে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণের ঘোষণা দেয় বিইআরসি। তবে বিভিন্ন ব্যয় অবমূল্যায়নের কথা বলে বিইআরসির ওই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে অপারেটরগুলো। এরপর পাঁচ মাসে পাঁচবার এলপিজির নতুন মূল্যের ঘোষণা এলেও এগুলোর কোনোটিই আমলে নেয়নি কোম্পানিগুলো। এমন পরিস্থিতিতে গত জুনে তারা আবার দাম পুর্ননির্ধারণের আবেদন করলে তা আমলে নেয় কমিশন। দাম নির্ধারণ নিয়ে অপারেটরগুলোরসঙ্গে কমিশন ও ক্যাবের দ্বিমতের ‘জট’ খুলতে গত ১৭ ও ১৮ অগাস্ট বিইআরসি দ্বিতীয় দফায় গণশুনানির দিন ঠিক করে। তবে এ নিয়ে ক্যাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয় উচ্চ আদালত। এরপর সুপ্রিম কোর্টে বিইআরসির লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে আগের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হলে নতুন শুনানির ক্ষেত্র তৈরি হয়। দেশে এখন ছোট-বড় ২৭টি কোম্পানি এলপিজি আমদানি ও সিলিন্ডারে ভরে বিপণনের ব্যবসায় যুক্ত। যদিও লাইসেন্স নিয়েছিল ৫০টি কোম্পানি। শুনানি করতে আবেদন জমা দিয়েছিল ১৮টি কোম্পানি। তাদের আবেদনের ভাষা ও যৌক্তিকতা একই ধরনের হওয়ায় কমিশন সবার পক্ষ থেকে ছয় কোম্পানির প্রতিনিধিকে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেয়।