মানবতার মা আপনি স্বৈরশাসক হবেন না : মানুষের কথায় কান দেওয়া বন্ধ করে দেশের ভালোর জন্য নিজে সিদ্ধান্ত নিন

মানবতার মা আপনি স্বৈরশাসক হবেন না : মানুষের কথায় কান দেওয়া বন্ধ করে দেশের ভালোর জন্য নিজে সিদ্ধান্ত নিন

সম্পাদকীয় মত, বাঙলার কাগজ : শেখ হাসিনা বিশ্বের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক পেয়েছিলেন। তাঁকে মানবতার মা-ও ডাকা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের এ নারী প্রধানমন্ত্রীকে কি তাহলে শেষমেষ মানুষ স্বৈরশাসক হিসেবে জানবে? কারণ শেষ ভালো যার, সব ভালো তাঁর। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী সেদিন একাত্তর টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন। একাত্তরের ওই তৈলাক্ত, দুর্নীতিবাজ এবং অঢেল সম্পত্তি করা সাংবাদিক এক সুবিধাভোগীর বিষয় তুলে শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছিলো, ফলে রাজাকারের বিষয়টি আসে। পরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রুপাত্মকভাবে নিজেরদেরকে রাজাকার বলে। তাঁরা তখন এটিও জানিয়ে দেয়, কোনও ট্যাগ দিয়ে এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আবার প্রধানমন্ত্রীই ছিলো আন্দোলনকারীদের ভরসারস্থল। কারণ তাঁরা প্রথম থেকেই নির্বাহী বিভাগের কথা বলে আসছেন। এ অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে একজন শিক্ষার্থীকে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় এবং কতোটা মেধাবী হতে হয়। আর তথাকথিত সেই সাংবাদিকের প্রশ্নের ধারা দেখে এর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতেই 'ম্যাসেজ পেয়ে গেছে' ছাত্রলীগ। এখন ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থী, গরীবের সন্তানদের পেটাচ্ছে, হাসপাতালে গিয়েও পেটাচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সমস্যাটির অনেক সুন্দর সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু এখন ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ হয়ে গেলো মেধাবীদের নিয়োগ দাবিতে আন্দোলন করা কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এখন প্রশ্ন জাগে, ছাত্রলীগেও কি তবে কোটা আছে? না হলে তাঁরা যে চাকরি পাবেন এর নিশ্চয়তা কি। তাঁরা যদি চাকরি পাবেন না, এটি জানতেন, তাহলে তো তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকতেন; কারণ তাঁদেরও চাকরি প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে গোপালগঞ্জসহ দেশের কোথায় কি পরিমাণে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে, তা নির্ণয় করা। যদিও একাত্তরে অধিকাংশ মানুষই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, শুধু চিহ্নিত কিছু মানুষ রাজাকার, আলবদর ছিলো। কারণ অনেক সাধারণ মানুষ ঘরে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন। সে হিসেবে শুধু রাজাকার-আল বদরদের পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে দেশের সকল মেধাবী সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু এটি সনদপ্রাপ্তদের উত্তরাধিকারদের দেওয়া হচ্ছে, তাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা এখনই নির্ণয় করা উচিত। একজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক হিসেবে বলছি, শুধু  গোপালগঞ্জ জেলায়ই বিপুল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে, খোঁজ নিন বের হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান আর নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখার আর প্রয়োজন নেই। কারণ এখন তাঁদের নাতি-নাতনিদেরও সন্তান হয়ে গেছে। স্বাধীনতার চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ কোটা অবশ্যই থাকবে। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনি ৫ শতাংশ, নারী ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও উপজাতি কোটাসহ সর্বমোট কোটা হতে পারে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। ৫৬ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই থাকতে পারে না। আর কোটা বাতিল চান না শিক্ষার্থীরা, চান সংস্কার অর্থাৎ তাঁরাও যাতে পড়াশোনা করে একটি চাকরি পেতে পারেন; আর নিজের পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য কিছু করতে পারেন। গরীবের মেধাবী সন্তানদের হাসপাতালে পাঠিয়ে এখনও কি তাঁদের কথা শুনবেন না প্রধানমন্ত্রী! আপনি কতোটুকু গোয়ার্তুমি করবেন তাহলে। তাহলে জেনে রাখুন, ইতিহাস আপনাকে স্বৈরশাসক হিসেবেই জানতে পারে। কারণ যখন ভোটের জন্য সরকার সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়, তখন তাঁদের কথা শুনে; আর যখন নিজেরাই জালিয়াতি করে পাস করে ফেলতে পারে, তখন কারও কথার দাম দেয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। না হয় ইতিহাস আপনাকে স্বৈরশাসক হিসেবে জানবে।