কালাম আঝাদ’র কলাম : বঙ্গবন্ধুদের হত্যা করা যায় না।

কালাম আঝাদ’র কলাম : বঙ্গবন্ধুদের হত্যা করা যায় না।

সম্পাদকীয় মত, বাঙলা কাগজ ও ডন : বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশীদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রাম। তাও আবার আমার শ্বশুর বাড়ির পাশের বাড়ি। তবে এই কর্নেলকে আমরা যারপরনাই ঘৃণার চোখেই দেখে আসছি। কারণ ছোটকাল থেকেই আমরা শুনে আসছি, শেখকে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যা করেছে সে। ফলে এক সময় ফ্রিডম পার্টির ভয়ে মানুষ কিছু না বলতে পারলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সবকিছু বদলে গেছে। এখন সেই রশিদের বাড়ি খা খা করছে। সেখানে একটি কুকুরও ঘুমায় না। এখন এ বাড়ি সরকারি সম্পত্তি।

আমার দাদা শ্বশুর তিন তিনবারের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি এলাকায় অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। তাঁর সততা আমাদেরকে এখনো পথচলা শেখায়। আমার দাদা শ্বশুরের নাম (কবির চেয়ারম্যান) এখনও মানুষের মুখে মুখে। অথচ অপকর্ম করার কারণে রশীদের নাম এখন একজন মানুষও নেয় না।

অপকর্ম করলে তার শাস্তি ভোগ করতে হবেই। সেটা আজ হোক আর কাল। এমন নিয়মই যেখানে, সেখানে একটি জাতির জনককে স্বপরিবারে আবার স্বজনসহ নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলা! সুতরাং এই পাপের শাস্তি তো পেতে হবেই, হবে।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ২ নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১৮ জন। এর মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ আবু নাসের, শেখ কামাল, সুলতানা কামাল খুকী, শেখ জামাল, পারভীন জামাল রোজী এবং শেখ রাসেল। আবার শেখ মনির বাড়িতে (গুলিতে গুরুতর আহত এবং হাসপাতালে মৃত ঘোষিত) শেখ ফজলুল হক মনি এবং বেগম আরজু মনি (বেগম সামসুন্নেসা)। এর সঙ্গে সেরনিয়াবাতের বাড়িতে (গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত) আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, নাঈম খান রিন্টু, পোটকা (গৃহভৃত্য) এবং লক্ষীর মা (গৃহভৃত্য)। 

তাঁদের আত্মার এমন শান্তি কামনা করছি, যে শান্তি সর্বোচ্চ এবং অপরিমেয়।

ওই কালোরাতে এই ১৮ জন ছাড়া ডিজিএফআইয়ের প্রধান কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদও নির্মমভাবে নিহত হন। 

এই ১৯ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা ছাড়াও হত্যা করা হয় পুলিশ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান এবং সামছুল হককেও। পাশাপাশি শেরশাহ সুরী রোডের ৮ ও ৯ নম্বর বাড়ি এবং শাহজাহান রোডের ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়িতে (মর্টারের গোলার আঘাতে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে নিহত) হত্যাকাণ্ডের কবলে পড়ে মারা যান রেজিয়া বেগম, নাসিমা, হাবিবুর রহমান, আনোয়ারা বেগম, আনোয়ারা বেগম (২), ময়ফুল বিবি, সাবেরা বেগম, আবদুল্লাহ, রফিকুল, সাফিয়া খাতুন, শাহাবুদ্দিন, কাশেদা, আমিনউদ্দিন এবং হনুফা বিবি। তাঁদের সকলের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের শিগগিরই দেশে এনে রায় কার্যকরের প্রত্যাশা করছি।

ওরা বঙ্গবন্ধুকে খুন করতে গেছে, বিনিময়ে নিজেরাই আজন্ম পাপে ডুবেছে এবং পাপের শাস্তি ভোগ করেছে। আর কয়েকজন পাপের শাস্তি ভোগ করার পথে রয়েছে। তাদের এ শাস্তি প্রাপ্য।

ওরা যতোই বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্যদের হত্যা করেছে, কিন্তু শহিদেরা ততোই জীবিত হয়ে উঠেছেন।

আসলে বঙ্গবন্ধুদের কখনোই হত্যা করা যায় না।

১৫ আগস্টের কালোরাতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ নিহত সকল শহিদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

অনেক শান্তিতে থাকুন আপনারা...

জয় বাংলা।