মন্ত্রী : মাছকে দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত করতে কাজ চলছে

মন্ত্রী : মাছকে দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত করতে কাজ চলছে
ডন প্রতিবেদন : মাছকে দেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি রপ্তানি পণ্যে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। শনিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানির মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। ‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’ এ প্রতিপাদ্যে ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্‌যাপন করা হবে। রবিবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন এবং সংসদ লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৫ লাখ ৩ হাজার মেট্রিক টন। বিশ্বে অভ্যন্তরিণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হচ্ছে ভাতে-মাছে বাঙালির চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মৎস্য খাতকে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বিকশিত করছেন এ ধারাকে অব্যাহত রেখে মৎস্য সম্পদে বিশ্বে আমরা অনন্য-আসাধারণ জায়গায় পৌঁছে যাবো।’ ‘এ লক্ষ্য নিয়ে মৎস্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এবারের মৎস্য সপ্তাহ উদ্‌যাপন হতে যাচ্ছে। ভাতে-মাছে বাঙালির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জায়গাতে আমরা শুধু পরিপূর্ণতাই আনবো না, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা অনুযায়ি মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি সম্পদ। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক প্রবাসি বেকার হয়ে দেশে ফিরছেন। স্বল্প আয়ের চাকরি বা ব্যবসা যাঁরা করতেন, তাঁরা বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনায় সৃষ্ট বেকারদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমাদের মৎস্য খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ ‘মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘব হচ্ছে, আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে এবং উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। আবার মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আমরা দেশে আনতে সক্ষম হচ্ছি। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।’ মৎস্য খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এর অন্যতম প্রধান কারণ সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারের গৃহিত পদক্ষেপে ইলিশের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বাদ-গন্ধ ফিরে এসেছে, পরিমাণ বেড়েছে। জাটকা নিধন বন্ধ করার সুফল আমাদের সামনে দৃশ্যমান।’ ‘দেশের মানুষের কাছে যে মাছগুলো দুর্লভ ছিলো, সেগুলো ফিরে এসেছে। বিলুপ্তপ্রায় ৩১ প্রজাতির দেশীয় মাছকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ফিরিয়ে এনেছি এবং সেটা আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। মৎস্যজাত পণ্য তৈরির খাতকেও সরকার উৎসাহিত করছে। দেশের বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় অঞ্চল তথা হাওর অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছি।’ মৎস্য খাতে কেউ যেনো ক্ষতিকর ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয় সেজন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষাক্ত কোনও খাবার দিয়ে মাছ আমরা বাড়াবো না। অপরিকল্পিতভাবে মাছের চাষবাদ করবো না।’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোল বোস মনি ও তৌফিকুল আরিফ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ, বিএফআরআই এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের উপপরিচালক শেফাউল করিম, নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজি আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।