বাংলাদেশি সাংবাদিকের বই থেকে বলিউডের ‘ফারাজ’
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটেছিলো এক ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনা। বন্দুকধারীদের ওই হামলায় মারা গিয়েছিলো বিদেশি নাগরিকসহ ২৮ জন। ওই ঘটনা নিয়ে পরের বছর প্রকাশ পায় দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি নুরুজ্জামান লাবুর লেখা অনুসন্ধানীমূলক বই ‘হোলি আর্টিজান- একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’।
এই বইয়ের পটভূমিকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বলিউডের ‘ফারাজ’ সিনেমা। সম্প্রতি সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ্যে আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন লাবু নিজেই।
আমাদের পাঠকদের জন্য লাবুর পোস্টটি তুলে ধরা হলো :
২০১৯ সালের কোনও এক দিনের কথা। সিনিয়র সাংবাদিক মোর্শেদ আলী খান ভাই আমার বইটা (হোলি আর্টিজান : একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান) খুঁজতেছিলেন। একদিন তাঁর সঙ্গে কথা হলো। বইটা তখন মার্কেট আউট। আমার কাছেও অতিরিক্ত কপি নাই। তবু অনেক কষ্টে একটা বই জোগাড় কইরা তাঁর কাছে পাঠাইলাম।
তারপর মাস ছয়েক পর মোর্শেদ ভাই আমারে ফোন করলেন। বললেন, বইটা চেয়েছিলেন তাঁর বন্ধু, বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক পরিচালক মহেশ ভাট। মহেশ ভাটের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভিশেষ ফিল্মস থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমার মোবাইল নম্বরটা দেবে কি না?
আমি বললাম, দেন ভাই। সমস্যা নাই। তারপর একদিন ভিশেষ ফিল্মস এর দুই কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হলো। কথা হলো মহেশ ভাটের ভাই মুকেশ ভাটের মেয়ে সাক্সেনা ভাটের সঙ্গেও।
তাঁদের ভাষ্য, তাঁরা আমার বইটা সংগ্রহের পর ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, তারপর পড়ছেন। বইটা যে ইনফরমেটিভ তার প্রশংসাও করলেন। তাঁরা হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা নিয়া একটা মুভি বানাবেন। সেইজন্য আমার বইয়ের ইনফরমেশন ব্যবহারের জন্য একটা চুক্তি করতে চান। বই থেকে ইনফরমেশন নিয়ে তাঁরা তাঁদের মতো করে সিনেমার স্ক্রিপ্ট করবেন।
আমি দুয়েক দিন চিন্তা-ভাবনা করলাম। তারপর টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হলো। আমি বলতে গেলে অল্প পয়সার বিনিময়েই তাঁদের সঙ্গে একটা চুক্তি করে ফেললাম। ২০২০ সালের সম্ভবত মার্চ মাসে ৩৬ পৃষ্ঠার একটা চুক্তি হলো ভিশেষ ফিল্মসের সঙ্গে। চুক্তিতে আমি সিগনেচার করে চুক্তিনামা পাঠালাম মুম্বাই। সেখান থেকে মুকেশ ভাট সিগনেচার করে পাঠালেন আমার কাছে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিলো, এই সিনেমা বানানোর তথ্য আমি তাঁদের পাবলিসিটির আগে প্রকাশ করতে পারবো না। এজন্য এতোদিন কাছের দুয়েকজনকে বললেও ঘটা করে বলি নাই।
২০২০ সালের করোনা মহামারি শুরু হলে সেই সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তি ধীরগতিতে চলছিলো। এর মধ্যেই অবশ্য চুক্তি অনুযায়ী পেমেন্ট করে দিছিলো তাঁরা। এখানে একটা কথা বলা আবশ্যকীয় যে, কাছের মানুষ, অনেকেই আমারে বলেন, মাত্র তিন লাখ রুপি, এত অল্প টাকায় বইটার চুক্তি করলেন কেনো? তাঁদের আমি বলি, আমার বইয়ের তথ্য নিয়ে তাঁরা চাইলে আমারে না জানিয়েও মুভিটা বানাতে পারতো। অর্থাৎ তাঁরা মুক্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে স্ক্রিপ্ট করতে পারতো। আমাদের দেশে তো এই রকমই হয়। কেউ কাউরে ক্রেডিট দিতে চায় না।
কিন্তু তাঁরা যে সম্মান ও প্রফেশনালিজম দেখিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, এতেই আমি খুশি। টাকা-পয়সা না দিলেও আমি রাজি হইতাম।
সেই ছবিটা মুক্তি পাইতেছে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। দুপুরে মুম্বাই থেকে ভিশেষ ফিল্মসের শাহিল হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দিলেন। ট্রেইলারের লিঙ্ক দিলেন। বলিউডের কোনও একটা মুভিতে যে আমার মতো অতি সাধারণ একজন মানুষের সামান্যতম একটু সংযোজন আছে তা ভাইবা পুলকিত হচ্ছি।’
‘আরেকটা বিষয়, যখন আমার সঙ্গে চুক্তি হয়, তখন ছবির নাম ঠিক হয়েছিলো না। তবে এই মুভিতে যে হোলি আর্টিজানে অন্য সবার মতো নিহত ফারাজকে কেন্দ্রীভূত কইরা তৈরি হবে, সেটা অনুমান করছিলাম। কারণ, ফারাজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভিশেষ ফিল্মস কর্মকর্তাদের একাধিক মিটিংও হইছে, তাঁরাই আমাকে বলছেন। তবে বিনিয়োগ আছে কি-না আমি নিশ্চিত না।’
‘যদিও আমার বইয়ে আমি ফারাজকে আলাদা করে হিরোইজমের যে মিথ প্রচার করা হইছে, তা নাকচ করে দিয়েছিলাম। কারণ, এর কোনও প্রত্যক্ষদর্শী আমি পাই নাই। কে বলেছিলো যে ফারাজকে জঙ্গিরা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাঁর দুই বান্ধবীরে ছেড়ে আসতে চায় নাই? এর কোনও উত্তর নাই। এইটা বানানো গল্প।’
‘ভিশেষ ফিল্মস, যদিও পরে তাঁরা প্রযোজনায় অনুভব সিনহাসহ অন্যদের সামনে এনেছেন, তাঁরা ফারাজকে হাইলাইট করে মুভিটা সম্পন্ন করছেন। ফারাজকে হিরো বানিয়েছেন। ছবিটার পরিচালক হানশাল মেহতা।’
‘আমি এসবের চেয়ে এক্সাইটেড এজন্য যে, বলিউডের কোনও একটা মুভিতে আমার সামান্যতম অংশগ্রহণ আছে। চুক্তিপত্রে ক্রেডিট লাইনে আমার ও আমার বইটার নাম দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হয়তো মুভির অ্যান্ড টাইটেলে মাইক্রো সেকেন্ডের জন্য তা দেখা যাইতেও পারে। তাতেই আমি খুশি। অতএব আপনারা আমারে অভিবাদন জানাইতে পারেন।’
‘তবে দুঃখজনক বিষয় হলো- হোলি আর্টিজান বিষয় নিয়া বাংলাদেশে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাই একটা মুভি বানিয়েছেন। শনিবারের বিকেল নামে সেই মুভি সরকার অকারণে আটকায়ে রাখছে। অবিলম্বে শনিবারের বিকেলে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়া গেলাম।’
‘জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল হোক। সবার জন্য শুভ কামনা।’