বোরখা পরে গুলি চালায় দেলু, কালা মনির ও আরিফ : অধিকাংশ আসামি পালিয়ে গেছে বিদেশে
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে বোরখা পরে কমান্ডো স্টাইলে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দেলোয়ার হোসেন দেলু, কালা মনির ও আরিফ। হত্যার আগে ঘাতকরা দাউদকান্দির গৌরীপুর পাওয়ার হাউসে বসে জামালকে খুনের পরিকল্পনা করে এবং ওই তিনজন পিস্তল হাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঘটনাস্থল দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে যায়। হত্যায় বোরখা পরে অংশ নেওয়া দেলোয়ার হোসেন দেলুকে (৩২) গ্রেপ্তারের পর বুধবার (১০ মে) সকাল ১০টায় র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এজাহারভুক্ত বেশ কয়েকজন আসামি বিদেশে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার দেলু তিতাস উপজেলার বড়গাজীপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ ৬টি মামলা রয়েছে। তাকে মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘাতকদের সহায়তার জন্য সহিদুল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম মাস্টারকে (৩৩) তিতাসের গাজীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেজর সাকিব হোসেন বলেন, সরাসরি বোরখা পরে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া দেলু জানিয়েছেন, তিনি (দেলু) ছাড়াও কালা মনির ও আরিফ বোরখা পরে কিলিং মিশনে অংশ নেয়। পরে তাদের অস্ত্রগুলো চান্দিনার এক ব্যক্তির কাছে রেখে তারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।
গত শনিবার ঢাকার রায়েরবাগ এলাকা থেকে মামলার ৪ নম্বর আসামি শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার (৪০) ও মিরপুর থেকে ৩ নম্বর আসামি মো. ইসমাইল (৩৬) এবং ৭ নম্বর চট্টগ্রাম থেকে শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়া একই সময়ে পুলিশ আরও গ্রেপ্তার করে তিনজনকে। তাদের মধ্যে রয়েছে আসামিদের বহন করা গাড়িচালক তিতাস উপজেলার লালপুর গ্রামের সামছুল হকের ছেলে মো. সুমন হোসেন (২৭), একই উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মৃত কালু মিয়ার ছেলে মো. রবি (৩৩) ও মৃত আসাদ মিয়ার ছেলে মো. শাহপরান (৩৪)। গ্রেপ্তার ওই তিনজন হত্যায় সরাসরি জড়িতদের পরিবহন, ভিকটিমের অবস্থান ও বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দেওয়া এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
র্যাব সূত্র জানায়, মামলার এজাহারভুক্ত ৯ আসামির ১ নম্বর আসামি সুজন (৩২) ও ২ নম্বর আসামি আরিফ (২৮) নেপালে, ৪ নম্বর আসামি বাদল (৪৫) দুবাই, ৬ নম্বর আসামি শাকিল (৩৫) ভারতে ও ৮ নম্বর আসামি অলি হাসান (৩৯) সৌদি আরবে এবং ৯ নম্বর আসামি কালা মনির (৪২) অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে আছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেজর সাকিব হোসেন বলেন, চান্দিনায় যে ব্যক্তির কাছে অস্ত্র ফেরত দেওয়া হয়, তাকে শনাক্তসহ হত্যায় জড়িত অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ৩০ এপ্রিল রাত সোয়া আটটার দিকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে তিন বোরখা পরা ব্যক্তি। এ ঘটনায় ২ মে রাতে দাউদকান্দি থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাত থেকে আটজনের নামে নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। জামাল হোসেন তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।