পারিবারিক দ্বন্দ্বের শিকার তরুণি নিজের হেফাজতে মুক্তি পেলেন

ডন প্রতিবেদন : পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে আদালতের আদেশে শেলটার হোমে যাওয়া যশোরের প্রাপ্তবয়স্ক এক তরুণি নিজ হেফাজতে থাকার অনুমতি পেলেন। যশোরের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল আদেশের বিরুদ্ধে তরুণির আপিল মঞ্জুর করে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেন বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে এ তরুণির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের ফলে এখন সে নিজ জিম্মায় থাকার সুযোগ পেলো।’ নারির স্বাবলম্বি হওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের এই আদেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন এই আইনজীবী। নুহিয়া আহমেদ বলেন, ‘কোনও নারি স্বাবলম্বি হতে চাইলে সমাজের প্রতিটি স্তরে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়। আইনি প্রতিকার থাকলেও অনেকে তা জানেন না বা জেনেও সাহস করেন না। এ তরুণির ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন উচ্চ আদালত, তা অনেক নারিকে সাহস জোগাবে।’ ‘তা ছাড়া আইনি প্রক্রিয়ায় নারিদের অধিকার নিশ্চিত হলে নারির ক্ষমতায়ন আরও সুদৃঢ় হবে।’ যশোরের ভেকুটিয়ার বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা এ তরুণির জন্ম ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তাঁর বাবা বিদেশে থাকেন, মা গৃহিনি। পরিবার জোর করে বিয়ে দিতে চাওয়ায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন এ তরুণি। বনানীতে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন তিনি। মাসহ স্বজনেরা বাড়ি ফিরে যেতে ভয়ভিতি দেখাচ্ছে জানিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি। মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে তাঁর মা গত ২৩ মে যশোরের আদালতে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে চারজনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, তাঁর ১৯ বছর বয়সি মেয়েকে ৪ আসামির একজন দেশের বাইরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ফুসলাতেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে তার মেয়েকে আটক করে যৌন নিপীড়ন করছে। যশোরের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল নালিশি আবেদনটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে তরুণিকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেন। পরে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তিনি গত ২৩ জুন ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তাঁকে কেউ অপহরণ করে নি। মায়ের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় তিনি পালিয়ে এসেছেন। মানবপাচার সংক্রান্ত কোনও প্ররোচনার শিকারও তিনি নন। মা মেয়েটিকে তাঁর হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন করলেও পরিবারের অধিনে নিজের নিরাপত্তার শঙ্কার কথা জানিয়ে এই তরুণি নিজ হেফাজতে থাকার আবেদন করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল তরুণিটিকে যশোরের ভেকুটিয়ায় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের শেলটার হোমে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। শেলটার হোমে থেকে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে গত জুলাইয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন তরুণি। হাইকোর্ট গত ২ সেপ্টেম্বর তাঁর বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) আদেশ দিলেন। এরমধ্যে ওই তরুণিকে যশোর শেলটার হোম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।