প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে

প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে
বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে দেশটির স্থানীয় সময় রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট স্থানীয় সময় রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।’ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বলেও প্রেস সচিব উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রাসহকারে লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়। নিউইয়র্কে থাকাকালীন শেখ হাসিনা সেখানেই অবস্থান করবেন। নিউইয়র্ক যাবার পথে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে দুই দিনের যাত্রা বিরতি শেষে স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৪ টা ১৬ মিনিটে হেলসিঙ্কির ভ্যানটা বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে হেলসিঙ্কি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা হেলসিঙ্কিতে দুই দিনের যাত্রা বিরতি করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের দেড় বছর পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সরকারি সফরের অংশ হিসেবে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিগত বছর গুলোর মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহবানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের একটি ছোট দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দিবেন। পরে তিনি একটি গাছের চারা রোপন করবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে ইউএন গার্ডেনে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। ২১ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক আয়োজিত ‘বিজনেস গোলটেবিল: ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’-অনুষ্ঠানেও যোগ দিবেন। ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ডারবান ডিক্লারেশন এন্ড প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন গ্রহণের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিবেন। এ ছাড়া তিনি ‘ হোয়াইট হাউস বৈশ্বিক কভিড-১৯ শীর্ষ সম্মেলন: মহামারি সমাপ্তি এবং আরও ভাল অবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন এবং বক্তৃতা দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একইদিন বিকেলে শেখ হাসিনা ‘রোহিঙ্গা সংকট: একটি টেকসই সমাধানের জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন এবং সেখানে পূর্বে-রেকর্ড করা বক্তৃতা দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সুইডিশ মিশন আয়োজিত ‘জাতিসংঘের সাধারণ কর্মসূচী: সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক নেতাদের নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংস্থার মহাসচিব কর্তৃক আহ্বান করা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দশক কর্মসূচির অংশ হিসেবে খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিবেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিজ মিয়া আমোর মোটলি কিউসি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগুয়েন জুয়ান ফাইক। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস এবং ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করবেন। জাতিসংঘ অধিবেশন এবং নিউইয়র্কে অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর ২৫--৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি সফরের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন এবং হেলসিংকিতে যাত্রা বিরতির পর ১ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।