প্রধানমন্ত্রী : কাজ না থাকলে বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখুন

প্রধানমন্ত্রী : কাজ না থাকলে বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখুন
ডন প্রতিবেদন : বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ যতোই হোক, তাতে ভর্তুকি দিয়ে গ্রাহকদের যে অনেক কম দামে সেবা দেওয়া হচ্ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উদ্বোধন করে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে যে আমরা যে বিদ্যুৎটা উৎপাদন করছি, তার খরচ কিন্তু অনেক বেশি। কিন্তু আমরা গ্রাহকদের সেবা দেবার জন্য সেখানে কিন্তু ব্যাপকহারে ভর্তুকি দিচ্ছি। উৎপাদনের যেই খরচ, সেই খরচটা কিন্তু আপনাকে বিল হিসেবে দিতে হচ্ছে না। এবং অনেক কম টাকা বিল দেওয়া হয়।’ ‘সেইক্ষেত্রে সকলকে অনুরোধ করবো যে বিদ্যুৎ ব্যবহারটায় আপনারা একটু সচেতন হবেন। নিজের হাতে যখন কাজ থাকবে না, আপনি বিদ্যুতের সুইচগুলো বন্ধ করে রাখেন। এতে বিলটাও কম আসবে, আর আপনাকেও টাকা কম দিতে হবে, আমাদের বিদ্যুৎটাও সাশ্রয় হবে। সেই বিষয়টা সবাইকে আমরা একটু অনুরোধ করবো।’ এ অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জের জুলদায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিবিয়ানা-৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট-২, নারায়ণগঞ্জে মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট, বাগেরহাটে মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট থেকে ২২৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হওয়া কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি এবং ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।’ দেশের মানুষের আর্থিক সঙ্গতি ও ক্রয়ক্ষমতা এখন বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন গ্রামের মানুষও টেলিভিশন, ফ্রিজ, এমনকি এসিও ব্যবহার করছে। অন্তত সেই সক্ষমতা আস্তে আস্তে গড়ে উঠছে এবং সেটা আরও গড়ে উঠুক, সেটাই আমি চাই।… বৈষম্যটা যেনো না থাকে। মানুষ যেনো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়।’ ‘কিন্তু ব্যবহারের সময় যদি আপনারা সাশ্রয়ি না হন, তাহলে কতো ভর্তুকি আমরা দিতে পারবো? সেটা দেখতে হবে। সেজন্যই সবাইকে আমরা অনুরোধ করবো যে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ি হতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের ঘরের সুইচটা নিজের হাতে অফ করায় লজ্জার কিছু নেই। তিনি নিজেও প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন না বলেই জানালেন। ‘আমি কিন্তু নিজের হাতেই করি। যখনই আমি বের হই, তখনই আমার যেখানে যেখানে মনে হয় যে এখানে বিদ্যুৎটা অপ্রয়োজনীয়, আমি আমার নিজের হাতে সুইচগুলো অফ করি।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি, গণভবন সরকারি। যতোই চালাক, এখানকার যাঁরা কাজ করে, তাঁদের নিয়ম হচ্ছে সব জ্বালিয়ে রাখা। কিন্তু আমি যতোটুকু জায়গায় বসবাস করি, সেটুকু আমি আমার সাশ্রয়টা সঠিকভাবে করে রাখি। অভ্যাসটা ঠিক রাখি।’ ‘চিরদিনতো কেউ আর প্রাইম মিনিস্টার থাকে না। এটা হয়তো পাঁচ বছরের জন্য আসে। এরপরে তো আর থাকবে না। তখন তো আবার নিজের মতোই চলতে হবে। অভ্যাসটা নষ্ট করে তো লাভ নেই।’ প্রতি ওয়াট বিদ্যুতের জন্য যে বিল দিতে হয়, তার চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা আপনাদের সবাইকে খুব অল্প খরচে (বিদ্যুৎ) দিয়ে থাকি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সবাইকে বলবো যে মিতব্যয়ি হন, যা সাশ্রয় হবে। যেটা হয়তো আরেকটা গরিব মানুষকে আমরা সহায়তা দিতে পারবো এবং দেশ এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ করোনাভাইরাস মহামারিরমধ্যে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা টিকা দিচ্ছি। টিকা ব্যাপক হারে দেবো। টিকাতে কেউ বাদ যাবে না। আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং যতো টাকা লাগে আমরা সেই স্বাস্থ্যসেবা মানুষকে দিচ্ছি এবং টিকার ব্যবস্থা করেছি।’ টিকা নেওয়ার পরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে এবং অনেক সময় লক্ষণও যে বোঝা যায় না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কাজেই, আপনি হয়তো নিজে বুঝতে পারছেন না, কিন্তু অন্যকে আপনি সংক্রমিত করে দিচ্ছেন। সেইক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। এবং সব সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা একটু মেনে চলবেন।’ বিদ্যুৎ বিভাগে আয়োজিত ৫ কেন্দ্রের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন অনুষ্ঠানে।