নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলা কাগজ : ইমরানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বলেছেন, গত মাসে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক শেষে দেওয়া বিবৃতিতে ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি ছিলো না।
গত ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। ইমরানের দাবি, এ অনাস্থা প্রস্তাব বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ। একটি বিদেশি রাষ্ট্রের (যুক্তরাষ্ট্রের) ‘হুমকির চিঠির’ সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে।
ইমরানের এ দাবির বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদ্য সমাপ্ত ৭৯তম ফরমেশন কমান্ডারস কনফারেন্সের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর ডিজি ইফতিখার বলেন, ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা তিনি বলতে পারেন না। তবে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালকের দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন যে, ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছে বা ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল এমন কোনও প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জবাবে প্রাইস বলেন, ‘আমরা এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত।’ প্রাইস ইমরানের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যে অভিযোগগুলো সামনে আনা হয়েছে, তার কোনও সত্যতা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধান ও গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ নীতিকে সমর্থন করি। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। সেটা পাকিস্তানে হোক বা বিশ্বের অন্য কোথাও হোক।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র আইনের শাসন এবং আইনের অধীনে ন্যায়বিচারসহ বৃহত্তর নীতি সমর্থন করে জানিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তান এবং বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়াতে’ নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং তাঁর সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রাইসের এসব মন্তব্যের এক দিন আগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও শাহবাজ শরীফকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানিয়েছে পেন্টাগনও। সপ্তাহের শুরুতে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুস্থ সামরিক সম্পর্ক’ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবো।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর ডিজির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া বক্তব্য ও বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীর অবস্থান স্পষ্ট করার প্রশংসা করেছে ইমরান খানকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক দলগুলো।
এ নিয়ে টুইটে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, ‘আইএসপিআর ডিজির সংবাদ সম্মেলন গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার মতো। গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন কেবল সব প্রতিষ্ঠানই নয়, সব পাকিস্তানিরই দায়িত্ব।’
বিলাওয়াল ভুট্টো আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সব সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং আরও বেশি গণতন্ত্র। যদি আমরা এ পথ অনুসরণ করি, বিশ্বের কোনও শক্তিই পাকিস্তানের অগ্রগতি থামিয়ে রাখতে পারবে না।’