নড়াইলের সেই কলেজ খুলেছে : লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা যান নি।

নড়াইলের সেই কলেজ খুলেছে : লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা যান নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঙলা কাগজ; নড়াইল : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজ ঈদের ছুটির পর রোববার (২৪ জুলাই) খুলেছে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজে যান নি। শিক্ষার্থীরাও কলেজে যান নি। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে কলেজশিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ আরেক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে।

কলেজশিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, কলেজে প্রায় সাড়ে ৩ শ শিক্ষার্থী আছেন। চালু আছে এইচএসসি ও স্নাতক শ্রেণি। রোববার কলেজে খুললেও কোনও শিক্ষার্থী কলেজে যান নি। যান নি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসও। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাজেদুল ইসলাম, মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম কলেজে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এডিএম জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, ‘কলেজ রোববার খুলেছে। হয়তো শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন নি, তাই আসেন নি। শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কলেজের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কীভাবে আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে। এখন শুধু দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ক্লাস শুরু হবে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কয়েক দিন পর কলেজে আসবেন। শিক্ষার্থীদের ফোন করে বা ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে কলেজে আনা হবে।’

পুলিশ জানিয়েছে, শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনায় আরেক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বয়স ১৭ বছর। সে কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওই ছাত্র অধ্যক্ষের মোটরসাইকেলসহ ৩ শিক্ষকের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত। শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই অভিযোগে গত শুক্রবার কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রায়হান শেখকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক- তদন্ত (ওসির দায়িত্বে) মাহমুদুর রহমান বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে সর্বশেষ একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রোববার দুপুরে নড়াইল শিশু আদালতে সোপর্দ করা হয়। আর রায়হানের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার নড়াইলের আমলি আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেন। এ নিয়ে পরদিন উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজ শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগতরা বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।